পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

মােতির মা ভয় পেয়ে গেল। বুঝলে লতার একেবারে গােড়ায় ঘা লেগেছে, উপর থেকে অনুগ্রহের জল ঢেলে মালী আর একে তাজা করে তুলতে পারবে না।

 একটু পরে কুমু বলে উঠল, “জানি, স্বামীকে এই যে শ্রদ্ধার সঙ্গে আত্মসমর্পণ করতে পারছি নে এ আমার মহাপাপ। কিন্তু সে-পাপেও আমার তেমন ভয় হচ্ছে না যেমন হচ্ছে শ্রদ্ধাহীন আত্মসমর্পণের গ্লানির কথা মনে করে।”

 মােতির মা কোনাে উত্তর না ভেবে পেয়ে হতবুদ্ধির মতাে বসে রইল। একটু চুপ করে থেকে কুমু বললে, “তােমার কত ভাগ্যি ভাই, কত পুণ্যি করেছিলে, ঠাকুরপােকে এমন সমস্ত মনটা দিয়ে ভালােবাসতে পেরেছ। আগে মনে করতুম, ভালােবাসাই সহজ—সব স্ত্রী সব স্বামীকে আপনিই ভালােবাসে আজ দেখতে পাচ্ছি ভালােবাসতে পারাটাই সব চেয়ে দুর্লভ, জন্মজন্মান্তরের সাধনায় ঘটে। আচ্ছা ভাই, সত্যি বলো, সব স্ত্রীই কি স্বামীকে ভালােবাসে?”

 মােতির মা একটু হেসে বললে, “ভালাে না বাসলেও ভালাে স্ত্রী হওয়া যায়, নইলে সংসার চলবে কী করে?”

 “সেই আশ্বাস দাও আমাকে। আর কিছু না হই ভালাে স্ত্রী যেন হতে পারি। পুণ্য তাতেই বেশি, সেইটেই কঠিন সাধনা।”

 “বাইরে থেকে তাতেও বাধা পড়ে।”

 “অন্তর থেকে সে বাধা কাটিয়ে উঠতে পারা যায়। আমি পারব, আমি হার মানব না।”

 “তুমি পারবে না তাে কে পারবে?”

 বৃষ্টি জোর করে চেপে এল। বাতাসে ল্যাম্পের আলাে থেকে থেকে চকিত হয়ে ওঠে। দমকা হাওয়া যেন একটা ভিজে নিশাচর পাখির

২০৭