পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

খানকয়েক ছবি আছে, তোর ভক্তকে বরদান করতে চাস যদি তো অভাব হবে না।”

 কুমু নবীনকে খাওয়াতে নিয়ে গেলে পর কালু এল ঘরে। বললে, “আমি মেজোবাবুকে তার করেছি শীঘ্র চলে আসবার জন্যে।”

 “আমার নামে?”

 “হ্যাঁ, তোমারই নামে, দাদা। আমি জানি, তুমি শেষ পর্যন্ত হাঁ-না করবে, এদিকে সময় বড়ো কঠিন হয়ে আসছে। ডাক্তারের কাছে যা শোনা গেল, তোমার উপর এত চাপ সইবে না।”

 ডাক্তার বলেছে হৃদ্‌যন্ত্রের বিকারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে, শরীরমন শান্ত রাখা চাই। এক সময়ে বিপ্রদাসের যে অতিরিক্ত কুস্তির নেশা ছিল এটা তারই ফল, তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে মনের উদ্বেগ।

 সুবোধকে এ-রকম জোর-তলব করে ধরে আনা ভালো হবে কি না বিপ্রদাস বুঝতে পারলে না। চুপ করে ভাবতে লাগল। কালু বললে, “বড়োবাবু, মিথ্যা ভাবছ, বিষয়কর্মের একটা শেষ ব্যবস্থা এখনই করা চাই, আর এতে তাঁকে না হলে চলবে না। বারো পার্সেণ্ট সুদে মাড়োয়ারির হাতে মাথা বিকিয়ে দিতে পারব না। তারা আবার দু-লাখ টাকা আগাম সুদ হিসেবে কেটে নেবে। তার উপর দালালি আছে।”

 বিপ্রদাস বললে, “আচ্ছা, আসুক সুবোধ। কিন্তু আসবে তো?”

 “যতবড়ো সাহেব হোক না, তোমার তার পেলে সে না এসে থাকতে পারবে না। সে তুমি নিশ্চিন্ত থাকে। কিন্তু দাদা, আর দেরি করা নয়, খুকীকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দাও।”

 বিপ্রদাস খানিকক্ষণ চুপ করে রইল, বললে, “মধুসূদন না ডেকে পাঠালে যাবার বাধা আছে।”

২৫০