পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

নেমেছিল ঠিক সেই শুভযোগটি ওই ছবিতে ধরা পড়ে গেছে। একএকদিন রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠে আলো জ্বালিয়ে ওই ছবিটি দেখেছি। প্রদীপের আলোয় ওর ভিতরকার রূপটি যেন আরও বেশি করে দেখা যায়।”

 “দেখো, আমার কাছে অত বাড়াবাড়ি করতে তোমার একটুও ভয় নেই?”

 “ভয় যদি থাকত তাহলেই তোমার ভাবনার কথাও থাকত। ওঁকে দেখে আমার আশ্চর্য কিছুতে ভাঙে না। মনে করি আমাদের ভাগ্যে এটা সম্ভব হল কী করে? আমি যে ওঁকে বউরানী বলতে পারছি এ ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয়। আর উনি যে সামান্য নবীনের মতো মানুষকেও হাসিমুখে কাছে বসিয়ে খাওয়াতে পারেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এও এত সহজ হল কী করে? আমাদের পরিবারের মধ্যে সব চেয়ে হতভাগ্য আমার দাদা। যাকে সহজে পেলেন তাকে কঠিন করে বাঁধতে গিয়েই হারালেন।”

 “বাস্ রে, বউরানীর কথায় তোমার মুখ যখন খুলে যায় তখন থামতে চায় না।”

 “মেজোবউ, জানি, তোমার মনে একটুখানি বাজে।”

 “না, কক্‌খনো না।”

 “হাঁ, অল্প একটু। কিন্তু এই উপলক্ষ্যে একটা কথা মনে করিয়ে দেওয়া ভালো। নুরনগরে স্টেশনে প্রথম বউরানীর দাদাকে দেখে যে-সব কথা বলেছিলে চলতি ভাষায় তাকে ও বাড়াবাড়ি বলা চলে।”

 “আচ্ছা আচ্ছ, ও-সব তর্ক থাক্, এখন কী বলতে চাচ্ছিলে বলো।”

 “আমার বিশ্বাস, আজকালের মধ্যেই দাদা বউরানীকে ডেকে পাঠাবেন। বউরানী যে এত আগ্রহে বাপের বাড়ি চলে এলেন, আর তার পর থেকে এতদিন ফেরবার নাম নেই, এতে দাদার প্রচণ্ড অভিমান হয়েছে তা

২৭১