পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

 অঘ্রানের সাতাশে পড়েছে বিয়ের দিন; এখনও দিনদশেক বাকি। এমন সময় লােকমুখে জানা গেল, রাজা আসছে দলবল নিয়ে। ভাবনা পড়ে গেল, কর্তব্য কী। মধুসূদন এদের কাছে কোনাে খবর দেয় নি। বুঝি মনে করেছে ভদ্রতা সাধারণ লােকের, অভদ্রতাই রাজোচিত। এমন অবস্থায় নিজেরা গায়ে পড়ে স্টেশন থেকে ওদের এগিয়ে আনতে যাওয়া কি সংগত হবে? খবর না-দেওয়ার উচিত জবাব হচ্ছে খবর না-নেওয়া।

 সবই সত্য, কিন্তু যুক্তির দ্বারা সংসারের দুঃখ ঠেকানাে যায় না। কুমুর প্রতি বিপ্রদাসের গভীর স্নেহ; পাছে তাকে কিছুতেই আঘাত করে এ-কথাটা সকল তর্ক ছাড়িয়ে যায়। মেয়েদের পীড়ন করা এতই সহজ; তাদের মর্মস্থান চারদিকেই অনাবৃত। জবরদস্তের হাতেই সমাজ চাবুক জুগিয়েছে; আর যারা বর্মহীন তাদের স্পর্শকাতর পিঠের দিকে কোনাে বিধিবিধান নজর করে না। এমন অবস্থায় স্নেহের ধনকে রােষ-বিদ্বেষ-ঈর্ষার তুফানে ভাসিয়ে দিয়ে নিজের অভিমান বাঁচাবার চেষ্টা করা কাপুরুষতা, বিপ্রদাসের মনের এই ভাব।

 বিপ্রদাস কাউকে না-জানিয়ে ঘােড়ায় চড়ে গেল স্টেশনে। গাড়ি এসে পৌঁছল, তখন বেলা পাঁচটা। সেলুন-গাড়ি থেকে রাজা নামল দল বল নিয়ে। বিপ্রদাসকে দেখে শুষ্ক সংক্ষিপ্ত নমস্কার করে বললে, এ কী, আপনি কেন কষ্ট করে?”

 বিপ্রদাস। বিলক্ষণ। এই প্রথম আসা আমার দেশে, অভ্যর্থনা করে নেব না?

 রাজা। ভুল করছেন। আপনার দেশে এখনও আসি নি। সে হবে বিয়ের দিনে।

 বিপ্রদাস কথাটার মানে বুঝতে পারলে না। স্টেশনে ভিড়ের

৪৯