পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

অনেক বেশি রক্ত আদায় করেছিলেন। খুন-জখম থেকে মামলা উঠল। সে-মামলা থামল ঘোষালদের সর্বনাশের কিনারায় এসে।

 আগুন নিবল, কাঠও বাকি রইল না, সবই হল ছাই। চাটুজ্যেদেরও বাস্তুলক্ষ্মীর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল। দায়ে পড়ে সন্ধি হতে পারে, কিন্তু ভাতে শান্তি হয় না। যে-ব্যক্তি খাড়া আছে, আর যে-ব্যক্তি কাত হয়ে পড়েছে দুই পক্ষেরই ভিতরটা তখনও গর্‌গর্ করছে। চাটুজ্যেরা ঘোষালদের উপর শেষ-কোপটা দিলে সমাজের খাঁড়ায়। রটিয়ে দিলে এককালে ওরা ছিল ভঙ্গজ ব্রাহ্মণ, এখানে এসে সেটা চাপা দিয়েছে, কেঁচো সেজেছে কেউটে। যারা খোঁটা দিলে, টাকার জোরে তাদের গলার জোর। তাই স্মৃতিরত্নপাড়াতেও তাদের এই অপকীর্তনের অনুস্বার-বিসর্গওআলা ঢাকি জুটল। কলঙ্কভঞ্জনের উপযুক্ত প্রমাণ বা দক্ষিণা ঘোষালদের শক্তিতে তখন ছিল না, অগত্যা চণ্ডীমণ্ডপবিহারী সমাজের উৎপাতে এৱা দ্বিতীয়বার ছাড়ল ভিটে। রজবপুরে অতি সামান্যভাবে বাসা বাঁধলে।

 যারা মারে তারা ভোলে, যারা মার আর তারা সহজে ভুলতে পারে না। লাঠি তাদের হাত থেকে খসে পড়ে ব’লেই লাঠি তারা মনে-মনে খেলতে থাকে। বহু দীর্ঘকাল হাতটা অসাড় থাকাতেই মানসিক লাঠিটা ওদের বংশ বেয়ে চলে আসছে। মাঝে মাঝে চাটুজ্যেদের কেমন করে ওরা জব্দ করেছিল সত্য মিথ্যে মিশিয়ে সেসব গল্প ওদের ঘরে এখনও অনেক জমা হয়ে আছে। খোড়ো চালের ঘরে আষাঢ়সন্ধ্যাবেলায় ছেলেরা সেগুলো হাঁ করে শোনে। চাটুজ্যেদের বিখ্যাত দাশু সর্দার রাত্রে যখন ঘুমোচ্ছিল তখন বিশপঁচিশ জন লাঠিয়াল তাকে ধরে এনে ঘোষালদের কাছারিতে কেমন করে বেমালুম বিলুপ্ত করে দিলে সে-গল্প আজ এক-শ’ বছর ধরে ঘোষালদের ঘরে চলে আসছে। পুলিস যখন খানাতল্লাসি