পাতা:যোগাযোগ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যোগাযোগ

২১

 রাজা উপাধি পাওয়ার পর থেকে কলকাতায় ঘোষালবাড়ির দ্বারে নাম খোদা হয়েছে “মধুপ্রাসাদ”। সেই প্রাসাদের লোহার গেটের এক পাশে আজ নবহত বসেছে, আর বাগানে একটা তাঁবুতে বাজছে ব্যাণ্ড। গেটের মাথায় অর্ধচন্দ্রাকারে গ্যাসের টাইপে লেখা “প্রজাপতয়ে নমঃ”। সন্ধ্যাবেলায় আলোকশিখায় এই লিখনটি সমুজ্জ্বল হবে। গেট থেকে কাঁকর-দেওয়া যে-পথ বাড়ি পর্যন্ত গেছে, তার দুইধারে দেবদারুপাতা ও গাঁদার মালার শোভাসজ্জা; বাড়ির প্রথম তলার উঁচু মেজেতে ওঠবার সিড়ির ধাঁপে লাল সালু পাতা। আত্মীয়বন্ধুর জনতার ভিতর দিয়ে বরকনের গাড়ি গাড়িবারান্দায় এসে থামল। শাঁখ উলুধ্বনি ঢাক ঢোল কাঁসর নহবত ব্যাণ্ড সব একসঙ্গে উঠল বেজে—যেন দশ-পনেরোটা আওয়াজের মালগাড়ির এক জায়গাতে পুরো বেগে ঠোকাঠুকি ঘটল। মধুসূদনের কোন্ এক সম্পর্কের দিদিমা, পরিপক্ক বুড়ী, সিঁথিতে যত মোটা ফাঁক তত মোটা সিঁদুর, চওড়া-লালপেড়ে শাড়ি, মোটা হাতে মোটা মোটা সোনার বালা এবং শাঁখার চুড়ি, একটা রুপোর ঘটিতে জল নিয়ে বউ এর পায়ে ছিটিয়ে দিয়ে আঁচলে মুছে নিলেন, হাতে নোয়া পরিয়ে দিলেন, বউয়ের মুখে একটু মধু দিয়ে বললেন, “আহা, এতদিন পরে আমাদের নীল গগনে উঠল পূর্ণ চাঁদ, নীল সরোবরে ফুটল সোনার পদ্ম।” বরকনে গাড়ি থেকে নাবল। যুবক-অভ্যাগতদের দৃষ্টি ঈর্ষান্বিত। একজন বললে, “দৈত্য স্বর্গ লুঠ করে এনেছে রে, অপ্সরী সোনার শিকলে বাঁধা।” আর-একজন বললে, “সাবেক কালে এমন মেয়ের জন্য়ে রাজায় রাজায় লড়াই বেধে যেত, আজ তিসি-চালানির টাকাতেই কাজ সিদ্ধি। কলিযুগে দেবতাগুলো বেরসিক। ভাগ্যচক্রের সব গ্রহনক্ষত্রই বৈশ্যবর্ণ।”

৭৪