পাতা:যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ

 আমাদের বাড়ি তৈরি হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকলাম।

 অঞ্চলটি ফাঁকা ফাঁকা। ঘর-বাড়ি হচ্ছে। অনেকে আসছে। বর্ষায় জলভাসি রাস্তা। মাছ, কাঁকড়া মিলত সেই জলে। প্রচুর কই, ভ্যাদা মাছ পাওয়া যেত। আমরা পাড়ার ছেলেরা সেগুলো ধরতাম।

 দক্ষিণে বাগজোলা খাল, পূর্বে একটি সরুখাল, উত্তরে শ্যামনগর রোড এবং পশ্চিমে যশোর রোড দিয়ে অঞ্চলটি ঘেরা। বাগজোলা খালের দক্ষিণে বাঙ্গুর কলোনি। তারও দক্ষিণে লেডি বোস্টন কলোনি বা লেকটাউন।

 বাঙ্গুর কলোনি আর লেডি বোস্টন কলোনির মাঝখানে যশোর রোড ঘেঁষে একটি ছোট্ট পাড়া। নাম বরাট কলোনি। কয়েকটা বাড়ি দিয়েই পাড়া শেষ।


 পুবদিকের সরু খালটা পেরোলে দিগন্ত বিস্তৃত জলাভূমি, সল্টলেক। সেখানে নৌকো করে মাছ ধরা হয়। ওই জলাভূমিগুলো ভরাট করা চলছে গঙ্গার পলি দিয়ে। পলি আসছে বিশাল বিশাল পাইপের মধ্য দিয়ে জলের সঙ্গে। উপনগর গড়া হবে। কাজে হাত দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়।

 আর, উত্তরে শ্যামনগর অঞ্চল। শ্যামনগর রোড দিয়ে যশোর রোডে যাওয়া যায়। অঞ্চলটি মস্তান অধ্যুষিত। প্রচুর কাপড়ের কল আছে।

 যশোর রোডটা বাংলাদেশের যশোর থেকে উত্তরের নাগেরবাজার দিয়ে দক্ষিণ দিকে এসে আর জি কর— এই শেষ। রাস্তাটা আর জি কর রোড নাম নিয়ে খাল পেরিয়ে পশ্চিমমুখো হয়ে শ্যামবাজার চলে গেছে। এই রাস্তায় বাস চলে। আমাদের বাসস্ট্যাণ্ডটা ছিল বাগজোলা খালের কাছেই।

 এ’পাড়ায় প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত। তার মধ্যে একটু অবস্থাপন্ন শচীন রায়। বড় দোতলা বাড়ি। অবশ্য তিনতলা বাড়ি একটাও নেই। শচীনবাবুর বাড়িতে আছে একটা ফ্রিজ। সেটাকে বলা হত রেফ্রিজারেটর। সেটা যখন চলে তখন সারা তল্লাটে জানান দেয় ঘট্‌ঘট্ আওয়াজে।

 আরেকজন পাড়ার এক ডাকাবুকো কণ্ট্রাক্টর সুশীল মুখার্জি। তাঁর বাড়ির উল্টোদিকে উঁচু টিনের দেওয়াল তোলা একটা বড় বাগান।

 এটা বাঙাল পাড়া। তাই, আমার দাদুকে পাড়ার অনেকেই চেনেন। প্রবীণরা প্রায়ই সকলেই চেনেন।

 ছিমছাম পরিবেশ, গ্রাম্য, শান্ত। এই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে শুরু হল আমাদের বসবাস। শুরু হল আমার যৌবনের পথ চলা।