পাতা:যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ - প্রবীর ঘোষ.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
লেখার জগৎ, যা ফুরোয় না
১৯৩

 বিপুলভাবে প্রচণ্ড সাড়া জাগিয়ে তিনি হাজির হলেন '৮৯-এর ফেব্রুয়ারিতে। ১৯ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকা ও ২১ ফেব্রুয়ারি আজকাল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিল গৌতম। আলোকপাতের সেই ছবিটি এই বিজ্ঞাপন দুটিতে ব্যবহার করল সে। বিজ্ঞাপনে লিখল, প্রবীর ঘোষ গৌতম ভারতীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে পরাজিত হয়েছেন এবং তার শ্রীচরণে মাথা নত করতে ও আশীর্বাদ ভিক্ষা করতে বাধ্য হন ইত্যাদি আরও কিছু।

 এই খবর চতুর্দিকে রটল। এর সঙ্গে আরও কিছু যুক্ত হয়ে অপপ্রচার চালাতে থাকল কিছু ভণ্ড বিজ্ঞান-আন্দোলনকারী। আমাদের সমিতির অবস্থা তখন সংকটের আবর্তে পাক খাচ্ছে। আমাদের উপর তখন লাগাতার আক্রমণ চলছে। দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে দিচ্ছে। কুৎসা রটানো হচ্ছে। ধিক্কার দেওয়া হচ্ছে। অপমানিত হলাম আমরা। আন্দোলন বন্ধের হুমকি দেওয়া হল আমাদের। ফল, কয়েকদিনের জন্য আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে গেল। চিঠির পাহাড় জমল আমাদের দপ্তরে।

 আমরা সাধারণ মানুষের কাছে সত্যকে তুলে ধরার প্রথম চেষ্টা করলাম আনন্দবাজারে। একটি প্রতিবাদপত্র তুলে দিলাম ‘সম্পাদক সমীপেষু’ বিভাগের সম্পাদক হীরেন দেবনাথের হাতে। তিনি জানালেন, মিথ্যে বিজ্ঞাপনের দরুন কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমাদের প্রতি তাঁর সমস্ত রকম সহানুভূতি আছে। তবুও আমাদের প্রতিবাদপত্রটি ছাপাতে তিনি অপারগ। কারণ, বিজ্ঞাপনদাতার বিরুদ্ধে কোনও চিঠি ছাপা যায় না।

 নিরাশ না হয়ে তখনই অভীক সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম। ফোনেই সমস্যাটা তাঁকে জানালাম। তিনি পুরোটা শুনলেন এবং বললেন, বিষয়টা তাঁর জানা।

 তিনি একজন সাংবাদিক পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ওই সাংবাদিক আমার ও গৌতমের সাক্ষাৎকার নেবেন এবং একটি প্রতিবেদন তৈরি করে দেবেন। সেই রিপোর্টটি আনন্দবাজারে ছাপা হবে।

 বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে এই ধরনের ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নেবেন শুনে খুব খুশি হলাম।

 চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আনন্দবাজারের প্রতিনিধি দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরি এলেন। আমার সাক্ষাৎকার নিলেন। গৌতমের কাছেও গেলেন ও সাক্ষাৎকার নিলেন।

 প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হল আনন্দবাজারে ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯। প্রথম পৃষ্ঠায় চার কলাম জুড়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন।

 ভাঙল বুজরুকদের অপপ্রচার, আক্রমণ, ষড়যন্ত্র। গতি পেল আমাদের আন্দোলন।

যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ-১৩