পাতা:যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ - প্রবীর ঘোষ.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ

 তখন আমার ক্লাসে লেখাপড়ায় ভাল দুটি ছেলে ছিল। একজন শিবু মুখার্জি, আরেকজন ভূপাল ভৌমিক। এরা দু'জনেই আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। কলেজে আমার আর দুই নিকট বন্ধু ছিল সমীর ঘটক ও নিশীথ গুহ। ওরা পড়াশুনায় সাধারণমানের। কিন্তু বন্ধু হতে তো আর মানের দরকার হয় না। নিশীথ গুহর বাবা তখন কেন্দ্রের মন্ত্রী। ওর ঠাকুরদার নামেই দমদমের আর এন গুহ রোড। ওরা বনেদি পরিবার। কিন্তু সেসব নিয়ে কখনওই হামবড়াই ভাব করত না। শিবু আসত ধুতি-পাঞ্জাবি পরে। আমাদের ক্লাসে ও-ই একমাত্র ছাত্র, যে ধুতি-পাঞ্জাবি পরত। তখন ধুতি-পাঞ্জাবির চল ছিল খুব কম। শিবু খুব চটপটে ছেলে। আর, ভূপাল আদর্শে কট্টর; খুব স্বাস্থ্যবান।

 একজন সহপাঠী হাফপ্যান্ট পরে আসত। তার নাম অমিত সেন। ওর পিছনে কেউ কেউ লাগত। তারা বলত, ‘আমাদের দাদু বলে ডাকবি’। অমিতের কোনও বৈশিষ্ট্য না থাকলেও ওর হাফপ্যান্টের জন্যই ও বিখ্যাত হয়ে গেল।

 আর এক সহপাঠী উৎপল মিত্র ওরফে চিনু মিত্র। শিশুসাহিত্যিক খগেন্দ্ৰনাথ মিত্রের ছোট ছেলে। ও গরমকালেও শার্টের তলায় সোয়েটার পরে আসত, যাতে একটু মোটা দেখায়।

 আমার এক সহপাঠী শ্যামল চক্রবর্তী। ও পরে মন্ত্রী হয়। শ্যামল খুব ভাল বক্তৃতা দিত। ওর এক ক্লাস ওপরে পড়তেন সুভাষ চক্রবর্তী। তিনিও মন্ত্রী হন পরে। ওরা দু’জনেই সিপিআই ও পরে সিপিএম করতেন। তখন দু’জনেই সিপিআই-এর ছাত্র সংগঠন করতেন আমাদের কলেজে।

 আর একজন ছিলেন মিহির সেনগুপ্ত। আরএসপি করতেন এবং সুবক্তা। শ্যামল চক্রবর্তী টিপিক্যাল কমিউনিস্ট পোশাক পরে আসত। পাজামা-পাঞ্জাবি ও কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। চোখে-মুখে তীক্ষ্ণতা। দাপুটে বক্তা।

 সুভাষ চক্রবর্তী ও মিহির সেনগুপ্ত দু’জনেই একই ক্লাসে পড়তেন। চেহারায় রোগা। সুভাষদাও ভাল বক্তৃতা দিতে পারতেন। শ্যামল ও সুভাষদা দু'জনেই দুটো উদ্বাস্তু কলোনিতে থাকতেন। ওঁরা স্বপ্ন দেখতেন ও দেখাতেন কংগ্রেসকে তাড়ালেই বিপ্লবটা সম্পূর্ণ হবে। গরিবরা ধনী হবে।

 কিন্তু গরিবরা ধনী হোক-বা-না-হোক; শ্যামল ও সুভাষদা ধনী হয়েছিলেন মন্ত্রী হয়ে।


 কলেজে যাই। ক্লাস হয়। আড্ডাও হয়।

 একদিন খবর শুনলাম, ইউরি গ্যাগারিন মহাকাশে গেছেন। চাঁদেও নাকি মানুষ পাঠানো হবে। আগেই চাঁদে রাশিয়ান মহাকাশযান লুনা২ পাঠানো হয়েছে। এই নিয়ে চারিদিকে হইহই। তেমনই হইহই কাণ্ড ঘটল ক্লাস-এ।

 আমাদের ক্লাসে একজন প্রফেসর ছিলেন পি আর ডিজি। বেশ মোটাসোটা