ঝলসানো জাঁদরেল চেহারার প্রফেসর। পড়ানোর থেকে অন্য বিষয়ে তাঁর নজর বেশি। মহাকাশ ও চন্দ্রাভিযানের খবরে হাতে চাঁদ পেলেন। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করতেন না যে, মহাকাশে মানুষ গেছে, চাঁদে মহাকাশযান গেছে এবং মানুষও যাবে। বলতেন, এটা অবাস্তব। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করি না। মহাকাশে কেউ যেতেই পারে না। চাঁদেও কিছু যেতে পারে না। এসব মিথ্যা খবর। আর এটা নিয়েই একতরফা বকবক চলত। এটা নিয়েই ক্লাস শেষ। পড়াশোনা লাটে উঠল প্রায়ই হত এরকম ঘটনা। আমরা ওনার কাণ্ড দেখে পরে হাসতাম।
তখন আমাদের কলেজে পড়াশুনা হত। রাজনৈতিক ছাত্র ইউনিয়নগুলো পড়াশুনা ডকে তোলেনি। কমিউনিস্ট পার্টির নেতা প্রমোদ দাশগুপ্ত কমিউনিস্ট পার্টিকে সর্বশক্তিমান করতে একটা দারুণ পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। উদ্বাস্তু কলোনি থেকে বিভিন্ন ছাত্রদের নিয়ে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি করে দিলেন। সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, অনিল বিশ্বাস, দীনেশ মজুমদার, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য—এদের দিয়ে বিভিন্ন কলেজের ইউনিয়ন দখলের জন্য এদেরকে কলেজে ভর্তি করালেন।
সে বছরই কলেজের ইউনিয়ন দখলের লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়ল সিপিএম এবং আরএসপি। আমাদের ক্লাসের ক্যান্ডিডেট হল তরুণ কমিউনিস্ট শ্যামল চক্রবর্তী। আর আরএসপি-র ছাত্র সংগঠনের থেকে আমাকে অনুরোধ করা হল ক্যান্ডিডেট হওয়ার জন্য।
চার বোন, মা-বাবা ও আমি এই সাতজনের সংসার চলে বাবার পেনশনের টাকায়। সুতরাং ওদের অনুরোধ কোনওভাবেই রক্ষা করতে পারলাম না। ক্যান্ডিডেট দাঁড় করালাম সমীর ঘটককে। জবরদস্ত লড়াই হয়েছিল। শ্যামল এক ভোটে জিতেছিল।
এই কলেজেই ‘প্রি-ইউনিভার্সিটি’ শেষ করলাম।
কলোনির জলছবি
তখন থাকি কেষ্টপুর কলোনিতে। জোর বৃষ্টি হলেই মাঠঘাট ডুবে যায়। রাস্তায় গোড়ালি জল। পথে-ঘাটে খলবল করে কৈ, ল্যাটা, ভ্যাদা, খলসে মাছের ঝাঁক, লাল ছোট কাঁকড়া। সেইগুলো ধরার ধুম পড়ে। হইহই আনন্দ। মুঠো মুঠো হাতে ধরেই পকেটে বা ব্যাগে চালান করে বাড়ি ফিরি। তাই দিয়ে দিব্বি একবেলা মাছ খাওয়া যায়।
আর দেখা মেলে প্রচুর সাপের। তবে সেসব বেশিরভাগই ঢোঁড়া সাপ। পাখি দেখা যায় প্রচুর। নানান রকম পাখি আসে দিনভর। পেয়ারা, পেঁপে, আম গাছে পাকা ফল খায়। কলকাকলিতে মেতে থাকে চারিপাশ।