সবে নিচুজমি ভরাট করে নতুন পাড়া হল। নতুন গাছগাছালিও হচ্ছে। বড় গাছের খুব অভাব। অনেকের বাড়িতেই নারকেল গাছ রয়েছে। প্রত্যেক বাড়ির সামনেই দেওয়াল ঘেরা বাগান। দেওয়ালে উঠেই ডাব, নারকেল পাড়া যায়। বাগানে ফুলের গাছ; টগর, জবা, গাঁদা ইত্যাদি ফুল। সেই ফুলেই গৃহদেবতার পুজো করে সবাই। অনেকের বাগানে লাউ, কুমড়ো, উচ্ছে ইত্যাদি ফলে।
পুবদিকে একটু এগোলেই প্রকাণ্ড আকাশ। দিগন্ত বিস্তৃত জলাভূমি, যেন আকাশ চুম্বন করছে সীমানায়। যার নাম সল্টলেক। ছোট ছোট নৌকা ভেসে বেড়ায় সে জলায়। আকাশে খেলা করে মেঘ। এসব দেখি ঘুরে ঘুরে।
গ্রীষ্মের নির্জন দুপুরে তপ্ত রোদ। আকাশটা খাঁ খাঁ করে। দু একটা চিল উড়ছে। চিই করে ডাকছে। শুনশান রাস্তাঘাট। দু'একজন ফেরিওয়ালা হাঁক পাড়ছে—বাসন নেবে নাকি গো...। সঙ্গে হাতের কাঠিতে চাপ কাঁসরের ‘টং ঠঠক্, টং ঠঠক্...’ আওয়াজ ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় চিলের ডাকের সঙ্গে। নীরবতা যেন অর্থবহ হয়ে ওঠে বুকের গভীরে।
ভিআইপি রোড তখনও তৈরি হয়নি। যশোর রোড দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। হেঁটে দশ মিনিটের পথ। যাওয়া যায় শ্যামবাজার থেকে বসিরহাট, বনগাঁ যেকোনও জায়গাতে। মফস্সলের বাস কলকাতায় ঢোকে না। আর জি কর-এর পাশে এসেই ওদের যাত্রাবিরতি। যশোর রোড দিয়ে বাসগুলো শ্যামবাজার খালপাড়ে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখান থেকে কলকাতার ভিতরে যেতে হয় স্টেটবাসে, ডবল ডেকারে, ট্রামে, টানা রিক্শায় বা হেঁটে। ট্রাম ডিপো বেলগাছিয়ায়। কেউ কেউ বেলগাছিয়াতেও নেমে যেত।
নাগেরবাজার যেতেও বাস। রিকশা নেই। ওটা বিরল প্রজাতির যান। সাইকেলেরই চল বেশি। না থাকলে, হাঁটা। হেঁটেই কত জায়গায় ঘুরলাম এই সময়ে।
আমাদের পাড়ায় গাড়ির মালিক সাকুল্যে জনা আটেক। কনট্রাক্টর সুশীল মুখার্জি, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রায়চৌধুরি, শচীন রায়, কনট্রাক্টর গণেশ দাস, ডাঃ হিমাংশু চক্রবর্তী, ডাঃ নীলকৃষ্ণ চৌধুরি, জাজ কৃষ্ণ মিত্র ও ডাঃ দীপক চন্দ্ৰ এই আটজনের গাড়ি ছিল। পরে অনেকেরই গাড়ি হয়।
ইট, ঝামা ফেলে রোলার চালিয়ে সমান করা হয় রাস্তা। কাঁচা রাস্তা নেই। চওড়া চওড়া রাস্তা। বাড়ির একপ্রান্ত থেকে উল্টোদিকের বাড়ির প্রান্তটি ষাটফুট। এটাই রাস্তা। পাশে কাঁচা নর্দমা। তবে পরিষ্কার। এই নর্দমার জলে নানারকম কুচো মাছ পাওয়া যায়।
যশোর রোডের কাছাকাছি তিন নম্বর ট্যাঙ্ক। সেখানে বিশাল বাগান দিয়ে