পাতা:রংপুর সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা (সপ্তম ভাগ).pdf/১৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩১৯, ৩য় সংখ্যা। ] পদ্মাপুরাণ ও দ্বিজবংশীদাস S8(t “তুমি আমি দুই নহে একই প্ৰকৃতি । কহিনু পূজিবে তোমা চম্পকের পতি ॥” পদ্মা লক্ষ্মীধর ও বিপুলার সহিত চম্পকনগর অভিমুখে চলিলেন। পথে কালীদহ হইতে চৌদ্দডিঙ্গা তুলিলেন, এবং অন্যান্য মৃত সকলের পুনর্জীবন দান করিলেন। যথাসময়ে সকলে দেশে উপস্থিত হইলে, বিপুল স্বামীকে বলিলেন, “যদি শ্বশুর পদ্মার পূজা করেন, তবে ধনজন লইয়া ঘরে যাইব । তুমি এই নৌকায় থাক। আমি ডোমিনীর বেশে গিয়া শ্বশুর শ্বাশুড়ীর মন বুঝিব।” এই বলিয়া বিপুলা গৃহে গেলেন, শ্বাশুড়ী সনকা তাহাকে চিনিয়া ফেলিলেন, এবং ক্ৰন্দনের রোল তুলিলেন। সনকার চীৎকার শুনিয়া চন্দ্ৰধর অন্তঃপুরে আসিলেন। বিপুল বলিলেন যে, যদি তাহার শ্বশুর পদ্মার পূজা করেন, তবে সকল ধনজন আবার পাইবেন। সনকা ও চন্দ্রপরের নিকট বিশেষ প্রার্থনা জানাইলেন, এবং পদ্মার পূজা করিতে অনুরোপ করিলেন। চন্দ্রপর দৃঢসংকল্প, তিনি পদ্মার 었 করিবেন না। চম্পকনগরের সকল লোক আসিয়া চন্দ্রধরের নিকট অনুরোধ জানাইল । চন্দ্ৰধর অটল । , “চান্দ বলে কাভু আমি না পূজিব কাণী । চণ্ডীর চরণ বিনে অন্য নহি জানি ।” চন্দ্ৰধর চণ্ডীকে স্মরণ করিলেন । দেবী আসিয়া বলিলেন, “যোহি পদ্মা সেহি আমি জানি ও নিশ্চয় । পদ্মাপূজা কর পুত্র না ভাব বিস্ময় ॥” দেবীর আদেশে চন্দ্ৰধর পদ্মাপূজা করিয়া, সকলকে লইয়া বাড়ী ফিরিলেন। জ্ঞাতিকুটুম্বগণের নিষেধ সত্ত্বেও কেবল লোকাপবাদ দূর করিবার জন্য চন্দ্ৰধর বিপুলার সতীত্বের পরীক্ষা করিলেন। ক্ৰমে ক্ৰমে নানা প্ৰকার সাতটি পরীক্ষা হইয়া গেল। অষ্টম পরীক্ষাই শেষ, ইহার নাম তুলােপরীক্ষা । যিনি সতী হইবেন, তিনি সমপরিমাণ তুলা হইতেও ওজনে হালকা হইয়া উপরে উঠবেন। এই পরীক্ষার সময় বিপুল বলিলেন যে, একমাত্র তাহার স্বামীই তাহাকে ধরিয়া তোলে উঠাইয়া দিবেন। অন্যে স্পর্শ করিতে পরিবে না। লক্ষ্মীধর যখন বিপুলাকে ধরিয়া তোলে উঠাইলেন। উভয়েই লঘু হইয়া উপরে উঠলেন। পদ্মার রথ আসিয়া তাহাদিগকে অন্তরীক্ষে লইয়া স্বৰ্গে চলিয়া গেল । এইস্থানে আমাদের আখ্যায়িকাটিও শেষ হইল । ভাবে, ভাষায় ও লিপিনৈপুণ্যে বংশীদাসের পদ্মাপুরাণ প্রচলিত কোন পদ্মাপুরাণ হইতে হীন নহে। কাব্যাংশে ইহা প্ৰাচীন বাঙ্গালা সাহিত্যের আসরে উচ্চ আসন পাইবার যোগ্য। কবি শিক্ষিত ও বহুদৰ্শী ছিলেন, সন্দেহ নাই । চন্দ্ৰধর এই কাব্যের শক্তি, আর বিপুল। এই কাব্যের প্রাণ। চন্দ্রধরের বীরত্বে ও বিপুলার চিরকমনীয় মাধুৰ্য্যে এই কাব্যে কবি যে সৌন্দৰ্য্যের রশ্মিপাত করিয়াছেন, তাহা প্ৰশংসনীয়। জগতে নিখুত কিছুই নাই। বংশীদাসের