পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কেন, ও কারো সঙ্গে মিলবে না ? ওর এত বড় শাস্তি ? না, মিলবে না, ও দখল করবে। সূৰ্য্যকে তার একলা আকাশ থেকে কে নাবিয়ে আনবে ? ও যে তফাতে থাকে সেই তফাৎই হচ্চে ওর সিংহাসন। সৰ্ব্বনাশী, তুমি ওর সেই সিংহাসনের পরে লক্ষ্য করেচ, ভাবচ কি, আমরা তা জানিনে ? আর তোমরা বুঝি সেই সিংহাসনের থাম ? হা, আমরাই ত। কঠিন পাথর দিয়ে গাথা, মানুষের বুকের পাঁজরের উপরে ভিৎ-গাড়া, তবুও সেই বুকের থেকে অসীম তফাৎ। এত বড় তফাতের ভার কি চিরদিন জগৎ সইবে ? যদি সেই বুকের ব্যথা, ঐ থামের পাথরের মধ্যে প্রবেশ করতে পথ পেত তাহলে সিংহাসন টলে যেত । সেইজন্যেই ত সে পথ একেবারে বন্ধ । সর্দারজি, আজ ত তোমাদের এখানকার সব অদরকারীদের বিদায় করে দেবার দিন। আমি তোমাকে পরামর্শ দিচ্চি সেই সঙ্গে খঞ্জনীকে আজ এখান থেকে চলে যেতে দাও। ওকে নিয়ে তোমাদের সুবিধে হবে না। আর সেই সুযোগে তুমিও বুঝি সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে পড়বে ? তাহলে ত গোড়াতেই বেরিয়ে পড়তুম। আমি একলা পালাবার মানুষ নই। যদি কোনোদিন এরা সবাই ছুটি পায় তবে আমার ছুটি হবে। আর আমিই বুঝি একলা চলে যাব ? বাইরে তোমার যে রঞ্জন আছে। আমার ত কেউ নেই। এখানকার এরাই যে আমার সব | রঞ্জনও এখানে আসবে। তাকে ত এখানে আসতে দেবে সর্দার ? নিশ্চয় দেব। তাকে বাইরে রেখে দেওয়ার চেয়ে এখানে আনা ঢের ভালো । কি জানি আজই হয়ত তুমি তাকে দেখতে পাবে। আমারো যেন তাই মনে হচ্চে । আজ সকালে আমি যেন তার গলা শুনতে পেয়েচি। কিন্তু তোমাদের রাজা যে আজই বলেছিল এখন তাকে আসতে দেবে না | বোধহয় তোমাকে চমকিয়ে দিতে চায়। তাই হবে। নিশ্চয় তাই হবে। আমার মন যে বলচে আজ এতদিন পরে তাকে আমি পাব । ९ সর্দার বল কি, এত সাহস ? কবুল করতেও ভয় নেই? বিশু সর্দার, মনে মনে ত সব জানই। খাচার পাখী শলাগুলোকে ঠোকরায়, সে ত আদর করে নয়। একথা কবুল করলেই কি আর না করলেই কি ? সর্দার আদর যে করে না, সেটা জানা আছে, কিন্তু কবুল করতে ভয় করে না সেটা অল্প কিছুদিন থেকে জানান দিচ্চে। ミ○○