পাতা:রক্তকরবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ br> একসঙ্গে বেড়াতেন। একবার একটা অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বিধানচন্দ্র রায় তার মূল্যবান সাদা শালটি কবিকে দিতেই তিনি সেই শাল রাণুকে দেন গায়ে দেবার জন্যে । রবীন্দ্রনাথ সাধারণত একটা কালো রঙের জোকবা গায়ে দিয়ে বের হতেন । একদিন ময়ূরভঞ্জের রাজার বাড়িতে তাঁদের নেমস্তন্ন ছিল। রাণুর চুল ছিল খুব লম্বা এবং ঘন । রবীন্দ্রনাথ বলতেন, এই রকমই থাক, বিনুনি করিস না। সেদিনও খোলা চুলেই রাণু রাজার বাড়িতে যাবার জন্য প্রস্তুত, মীরা'দেবী বললেন, ‘আয় তোর চুল বেঁধে দিই। রবীন্দ্রনাথ বলে উঠলেন, ‘না, না, ঠিক আছে। মীরা দেবী আর কিছু বললেন না। প্রতিমা দেবী এসব ব্যাপারে মাথা ঘামাতেন না, চুপচাপ থাকতেন। শেষ পর্যন্ত খোলা চুলেই রাণু কবির সঙ্গে বেরিয়ে পড়লেন। এই সময় দীনেশচন্দ্র সেনও কবির সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছিলেন। কবি তাকে সপরিবারে একদিন নিমন্ত্রণ করেন । এইভাবেই দিন কাটছিল তখন । রবীন্দ্রনাথ তাঁর ঘরে জানলার ধারে একটি টেবিলে লিখতেন। রাণু সারা বাড়িতে দাপাদাপি করে ঘুরে বেড়াতেন। মাঝে মাঝে ডেকে বলতেন, নাটক লিখছি, তোকে অভিনয় করতে হবে। কবি রাণুকে একবার বলেছিলেন, নন্দিনী-তুই। কিন্তু রাণু ১৯২৫ সালে। শ্রীমতী রাণু রক্তকরবীতে নন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করতে পারেন নি, কিন্তু একবার বিসর্জন নাটকে অপর্ণার ভূমিকায় অভিনয় করেন ১৯২৩ সালে । এই সময়কার একটি বর্ণনা শিলঙের চিঠি (৯ জুন ১৯২৩ তারিখে রচিত, পূরবী কাব্যে সংকলিত) শীর্ষক কবিতায় পাই, তার প্রসঙ্গিক অংশ এখানে উদ্ধৃত হল : “গমি যখন ছুটল না আর পাখার হাওয়ার শরবতে, ঠাণ্ডা হতে দৌড়ে এলুম শিলঙ নামক পর্বতে। মেঘ-বিছানো শৈলমালা, গহন-ছায়া অরণ্যে ক্লান্ত জনে ডাক দিয়ে কয়, ‘কোলে, আমার শরণ নে ' বুকের মাঝে কয় কথা সে সোহাগ-ঝরা সংগীতে। নিশ্বাসে তার বিষ নাশে আর অবল মানুষ বল লভে । পাথর-কাটা পথ চলেছে বাকে বাঁকে পাক দিয়ে, নতুন নতুন শোভার চমক দেয় দেখা তার ফাঁক দিয়ে। দার্জিলিঙের তুলনাতে ঠাণ্ড হেথায় কম হবে, একটা খদর চাদর হলেই শীত-ভাঙানো সম্ভবে । চেরাপুঞ্জি কাছেই বটে, নামজাদা তার বৃষ্টিপাত ; মোদের পরে বাদল-মেঘের নেই ততদূর দৃষ্টিপাত।”