পাতা:রঙ্গলাল-গ্রন্থাবলী.djvu/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদ্মিনী-উপাখ্যান এতদেশীয় অনেক লোকের ভ্রম অাছে। মিত্রাক্ষরে এবং মিতাক্ষরে রচিত, যতি-সমনুিত, অনুপ্রাসাদি অলঙ্কারে ভূষিত পদবিন্যাস করিলেই তাহ কাব্য হয় না। সুবিখ্যাত সাহিত্য-দৰ্পণ গৃন্থে ইহার যথার্থ লক্ষণ লিখিত হইয়াছে। যথা,---“কাব্যং রসাত্মকং বাক্যম্।” এই স্বল্প বাক্যে কবিতাকলার গুণ ব্যাখ্যাত ও বৃহদৃ গ্রন্থবিশেষের মৰ্ম্ম ব্যক্ত হইয়াছে। প্রত্যুত কাব্য মানসিক ধ্যানধূতিরূপ পুষ্পবাটিকাস্থ অশ্লেষবিধ ভাবকুসুমের সৌরভমাত্র, সেই সুগন্ধভাব-প্রবহণে কবিদিগের মলয়াণিলবৎ রচনা শক্তিই পটুতর। কবিতার অসাধারণা শক্তি মনুষ্যের মনে সর্বপ্রকার রগোদ্দীপনে ইহার মহীয়সী ক্ষমতা । শাস্ত্রকারের পৃত্যেক রসোৎপত্তির এক একটা নিদান নির্দেশ করিয়াছেন, কিন্তু কবিতাকে সকল রসের নিদান কহ। যাইতে পারে। মোহের প্রত্যক্ষ কারণ কিছুই নাই, অথচ কবিতা পাঠ বা শবণ করত মনুষ্যের অশ্রুপাত হইতেছে ;---হাস্যের প্রত্যক্ষ কারণ কিছুই নাই, অথচ কবিতা পাঠ বা শূ বণ করত জনসমাজে হাস্যার্ণব তরঙ্গিত হইতেছে ;–বীভৎসের প্রত্যক্ষ কারণ কিছুই নাই, অথচ কাব্যপাঠক বা শ্রোতার মুখভঙ্গীতে তাহ প্রকৃষ্টরূপে লক্ষিত হয়। কবিতার আর এক গুণ এই, তাহা সুমুপ্তপ্রায় মানসিক বৃত্তিচয়কে সহসা জাগরিত এবং উত্তেজিত করিতে পারে। পূচীন জাতিদিগের মধ্যে এই এক রীতি ছিল, তাহারা বিগ্রহব্যসনাদি সমুদায় উৎসাহকর ব্যাপারে কবিদিগের সাহচর্য্য রাখিতেন। কবিগণ উক্ত জাতিদিগের শৌর্য্য বীর্য্য গুণসম্পনু পূর্বপুরুষদিগের গুণানুবাদ গান করিতেন। তাহাতে শ্ৰোতৃবর্গের মানসে বীর, শাস্তি, রৌদ্র পূভূতি ভাব সকলের সমুদ্ভবে বিশেষোপকার হইত। প্রকৃত কবিদিগের অন্তঃকরণ সহস্রধারা নামক বিচিত্র উৎসস্বরূপ, তাঁহাতে যেরূপ সামান্যরূপ শব্দ করিলেই ধারা নির্গত হয়, কবিদিগের অন্তঃকরণ হইতে সেইরূপ সামান্য ঘটনাতে ভাবধার নিঃস্বত হইতে থাকে । ఆన কবিতার * অার এক শক্তি, তাহ আমাদিগের স্বাভাবিক অতি সূক্ষ্মতর ভাবসমূহকে সচেতন করিতে পারে। তদুর দয়া, করুণা, মমতা, প্রণয় প্রভৃতি মানসিক ধৰ্ম্মসকল বৃদ্ধিযুক্ত হয় ও চিন্তা পুভূতি পরিকল্পনার বিশুদ্ধতা জন্মে। প্রকৃত কবি ব্যক্তি কোন ইতর বা গহিত কার্য্যকারণে অগত্যা বাৰিত হফুল তাহার আর মৰ্ম্মপাড়ার সীমা থাকে না । কবিতার অপর এক গুণ এই, তাহা সাংসারিক সামান্য চিন্তাজাল ও ইন্দ্রিয়ভোগ শক্তি হইতে মনুষ্যের মনকে সর্বদা বিমুক্ত রাখিতে পারে এবং অন্তঃকরণে এরূপ সুদৃঢ় বিশ্বাসের সংস্থান করে যে, জাগতীয় সামান্য প্রকার ক্ষণিক সুখ ব্যতীত এক সুনিৰ্ম্মল নিত্যসুখসম্ভোগের সম্ভাবনা আছে। কবিতা একপ্রকার ধৰ্ম্মবিশেষ। কবিরা নিসর্গরূপে ধৰ্ম্মের পুরোহিত। তাহারা জগতীস্বরূপ কার্য্যের ক্রমপুদৰ্শনপূর্বক । তৎকৰ্ত্তার সত্তা সংস্থাপন কবেন, তাহারা মানুষের নিকট ঐশিক ক্রিয়-প্ৰণালীয়, যথার্থ নিরূপণ করিয়া দেন। কবির নীরস অস্থিসার তত্ত্বশাস্ত্রের শরীরে আত্মার সঞ্চার করত তাহাকে স্বগীয় সৌন্দর্য্যে শোভিত করেন । তাহাদিগের উপদেশে আমরা অচেতনা পদার্থ সকলকে সচেতনাস্বরূপ পূ ত্যক্ষ করি। তথাহি :--- “তরু লতিকায় যেন বচন নিঃসরে । বেগবতী নদীচয় গ্ৰন্থ-ভাব ধরে। উপদেশ দান করে পাষাণ সকল । সকলি প্রতীত হয় সুন্দর নিকল।” অপিতু, মনোজ্ঞ ভাবভেরণে মনুষ্য মনোভূষণকারিণী ও হৃদয়-পদ্মে ঔদার্য্যাদি সত্ত্বগণরূপ মধুসঞ্চারিণী এই চমৎকারিণী বিদ্যা মনুষ্যকে ইতর এবং স্বার্থপর চিস্তাচক্র হইতে যেরূপ দূরান্তরিত রাখে, এমন তার কিছুতেই রাখিতে পারে না। কোন জ্ঞানীপবর কহেল, “কবিদিগের মর্য্যাদাকল্পে বক্তব্য এই যে, আমি তাহাদিগকে কস্ট্রিান্তকালে • এতদ্ধেশীয় লোকের শ্রীবর্দ্ধনেচ্ছুক কোন প্রসিদ্ধ গ্রন্থকারের গ্ৰন্থ হইতে এই পরিচ্ছেদের কিয়দংশ লিখিত হইল ।