পাতা:রঙ্গলাল-গ্রন্থাবলী.djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদ্মিনী-উপাখ্যান స్సీరి সেইরূপ অরিসিংহ যুদ্ধে হয়ে বল-হত। অস্ত্রাঘাতে রক্তপাতে অবশেষে জীবন-বিগত। শেষ সমরে ভীমসিংহের প্রবেশ। সমরে মরিল জ্যেষ্ঠ কুমার সুন্দর। শুনি নৃপমণি হন অত্যন্ত কাতর। কিন্তু বজাঘাত-প্রায় ক্ষণিক সে শোক । হৃদয়ে উদয় ধৈর্য্য-সূর্য্যের আলোক।। একে ইস্লামের প্রতি দ্বেষ ঘোরতর। তাহাতে স্বদেশ-প্ৰীতি-পূর্ণিত অধর। তাহে কুল-লভূজা-রক্ষা রাজকুল-বত । কোন ক্রমে সে কলঙ্ক না হয় সঙ্গত । তাহে ক্ষত্রিয়ের এই ধৰ্ম্ম চিরন্তন । সাক্ষাৎ কৈবল্যদাতা সমরে মরণ । বিশেষে আশুiস-বারি ত্যক্ত মনোমীন। একেবারে জীবনের প্রতি মায়াহীন । যেরূপ দ্বীপের অালে যুনি দিবাভাগে । সেইরূপ শোক-তাপ মনে নাহি লাগে । পরদিন পুন: রাজা বিহিত আচারে। • রাজ্য-পাটে বরিলেন দ্বিতীয় কুমারে। তিন দিন অবসানে পাঠালেন রণে । মরিল কুমার যুদ্ধ করি প্রাণপণে । এইরূপে একে একে দশ পুত্র হত । ঘোরতর বিগ্ৰহেতে মাসাধিক গত। শ্ৰীহীন চিতোরপুরে দিনে অন্ধকার। কেবল বিশ্রুত রমণীর হাহাকার। যে ছিল পুরুষ মাত্র রাজ-সন্নিধান। চিতোর হইল নারী-রাজ্যের সমান । একদা বসিয়া ভীমসিংহ দরবারে । কহিছেন সম্বোধিয়া যত সরদারে। “মরিল সকল পুত্র বাকী মাত্র এক । করিব তাঁহারে অদ্য রাজ্যে অভিষেক । তারে রাখি রাজ্য-পাটে আমি যাব রণে । লভিব অক্ষয়-স্বর্গ জীবন-অপণে । শক্রহস্তে পরিত্রাণ হেতু নারীগণ । পাণত্যাগ করিবেক পবেশি দহন।” শুনিয়ে অজয়সিংহ পিতার বচন । করপুটে ভূপতিরে করে নিবেদন । “অনুচিত কথা কেন কন মহারাজ । এবার সমর-সজুজ সেবকের কাজ । এই তো কালীর বাণী আপনার প্রতি । না দিলে এগার পুত্ৰ নাহি অব্যাহতি। আপনি যাবেন যদি সাজিয়ে সমরে । কহ তাত মঙ্গল হইবে করি তরে ? কি ছাঁর আমার এই আসার জীবন ? তব নাশে রাজ্য-আশে করিব বঞ্চন ? অনুমতি দেহ পিতা রণে যাই আমি । তব কার্য্যে প্রাণ ত্যজি হই স্বৰ্গগামী ।” শুনিয়ে পুত্রের কথা সজল নয়নে । কহিলেন ভীমসিংহ অমিয়-বচনে । “কেন বাপৃ অযুক্ত কথায় আস্থা প্লাখ। পুবোধ-চন্দনে স্বীয় মন-পুষ্প মাখ। দেখ দেখি বিচারিয়ে মনের ভিতর । কি আছে মঙ্গল মম ইহার আস্তর ? মরিল সকল লোক জ্ঞাতি বন্ধুগণ। পুত্র হত পত্নী হত, চু্যত সিংহাসন । পূবল বিজয়ী বৈরী ঘোর অত্যাচারী। সহর্বস্বাস্ত হয়ে তাঁর কি করিতে পারি ? অতএব আমার মঙ্গল কোথা তার ? মরণ মঙ্গল মম এই জান সার।।" এইরূপে পিতা পুত্রে বাদ অনুবাদ । উভয়ের মন পাণ পুতি অবসাদ । শেষেতে রাজার বাক্য হইল প্রবল। “লাজ সাজ’ শব্দে পূর্ণ আকাশমণ্ডল । ক্ষত্রিয়দিগের প্রতি রাজার উৎসাহ-বাক্য । স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাচিতে চায় হে, কে বাচিতে চায় ? দাসত্ব-শৃঙখল বল কে পরিবে পায় হে, কে পরিবে পায় । কৌটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে, নরকের পায় ।