রজনীর কথা । রাগ থাকে ? আমি উঠিলাম— েতাহার সঙ্গে চলিলাম। তিনি সিড়িতে উঠিতে লাগিলেন—আমি পশ্চাৎ পশ্চাৎ উঠিতেছিলাম। তিনি বলিলেন, “ তুমি দেখিতে পাও না—সিড়িতে উঠ কিরূপে ? না পীর, আমি হাত ধরিয়া লইয়া বাইতেছি।” আমার গা কঁাপির উঠিল—সৰ্ব্বশরীরে রোমাঞ্চ হইল— তিনি আমার হাত ধরিবেন। ধরুন না-লোকে নিন্দা করে করুকৃ—অামার নারীজন্ম সার্থক হউক ! আমি পরের সাহায্য ব্যতীত কলিকাতার গলি গলি বেড়াইতে পারি, কিন্তু ছোটবাবুকে নিষেধ করিলাম না । ছোটবাবু-বৰিব কি ? কি বলিয়া বলিব—উপযুক্ত কথা পাই না-ছোটবাবু হাত। ধরিলেন ! * o যেন একটি প্রভাত-প্রফুল্ল পদ্মদলগুলির দ্বারা *আমার প্রকোষ্ঠ বেড়িয়া ধরিল—যেন গোলাবের মালা গাঁথিয় কে আমার হাতে বেড়িয়া দিল ! আমার আর কিছু মনে নাই। বুঝি, সেই সময়ে, ইচ্ছা হইয়াছিল—এখন মরি না কেন ? বুঝি তখন গলিয়া জল হইয়া যাইতে ইচ্ছা করিয়াছিল--বুঝি ইচ্ছা করিয়াছিল শচীন্দ্র আর আমি, দুইটি ফুল হইয়া এইরূপ সংস্পষ্ট হইয়া, কোন বন্যবৃক্ষে গিয়া এক বোটার বুলিয়া থাকি। আর কি মনে হইয়াছিল—তাহা মনে নাই। যখন সিড়ির উপরে উঠিয়া, ছোটবাবু হাত ছাড়িয়া দিলেন—তখন দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিলাম-এ সংসার আবার মনে পড়িল— সেই সঙ্গে মনে পড়িল—“ কি করিলে প্ৰাণেশ্বর ! না বুঝিয়া কি করিলে ! তুমি আমার পাণিগ্রহণ করিরাছ। এখন তুমি আমার গ্রহণ কর না কর—তুমি আমার স্বামী—অামি তোমার পত্নী-ইহজন্মে অন্ধ ফুলওরালীর আর কেহ স্বামী হইবে না ? সেই সময়ে কি পোড়া লোকের চোখ পড়িল ? বুঝি তাই।
পাতা:রজনী - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।