পাতা:রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৯৩১).pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পদ্ম পিসীমা
১৯

নতুন বাড়ী কতদূর হ’ল, এই রকম কত কথা। তার পর সকলে পিসীমাকে নিজেদের খবর শোনাতে আরম্ভ করলে। মেয়েদের কার কার নতুন বন্ধু হয়েছে, সে-কথা হ’ল; ইস্কুলে যে-সব মেয়েরা পড়ে, তাদের মধ্যে কার কার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, কে নতুন মাষ্টার এসেছে, এবার স্বদেশী মেলা কেমন হয়েছিল, এই সব কত কি পরিচয় দেওয়া হ’ল।

 কুমুদিনীর বড় ছেলে ব্রজনাথ—ডাকনাম ভোঁদা—কলেজে পড়ে কি না, তাই তিনি একটু চালাক। মাঝখান থেকে জিজ্ঞাসা ক’রে বস্‌ল, হ্যাঁ দিদিমা, তোমার নাম পদ্ম হ’ল কেন? তুমি বুঝি দেখ্‌তে পদ্ম-ফুলের মত ছিলে?

 ছেলেবেলায় পিসীমা দেখতে কেমন ছিলেন, তা ত আমরা জানি না, তবে সুন্দরী যে ছিলেন, তা বুঝিতে পারা যায়। এখনো চুল তেমন পাকে নি, এখনো মুখখানি ঢলঢলে, চোখ ভাসা-ভাসা, এখনো হাসলে গালে টোল খায়। পিসীমা বল্‌লেন,—বাপ-মা ত আমায় জিজ্ঞাসা ক’রে আমার নাম রাখে নি! আমি আর যাই হয়—আফিংখোর কমলাকান্তের পদী পিসী ত নই! আর তোর নাম ভোঁদা হ’ল কেন?

 ঘরশুদ্ধ ছেলেমেয়ে খিল খিল ক’রে হেসে উঠল। ব্রজনাথ অপ্রস্তুত হয়ে বল্‌লে, ও ত আমার ভাল নাম নয়।

 —রেখে দে তোর ভাল নাম! কাচের আলমারীতে তোর কি নাম তোলা আছে—তার কে খোঁজ রাখে রে! দেশসুদ্ধ লোক তোকে কি ব’লে ডাকে? আ মরি, নামের কি ছব্বা! ভোঁদা, ভোঁদা! গোঁড়া নেবুর মত টক জোঁদা! আর আমার নাম? কথায় বলে, আহা পদ্ম-ফুলের মত দেখতে!