আছে, জিজ্ঞাসা ক’রে পিসীমা বললেন,—হ্যাঁ রে, আজকাল তোদের কি যে সব কাণ্ডকারখানা হচ্চে, কিছুই বুঝতে পারি নে।
—কেই-বা বুঝতে পারে? এই দু’মাস রাজবাড়ী নেমন্তন্ন ছিল, সেখানে কাটিয়ে এলাম। ঠিক রাজভোগ নয়, মোটা চাল আর কলায়ের ডাল, তবু ত ঘরের ভাত বেঁচে গেল! আগে লোকে বল্ত হরিণবাড়ী, এখন বলে রাজবাড়ী।
—শুনলে ছেলের কথা! জেলে যাওয়া কি বড় পৌরুষের কথা?
—বড় লজ্জার কথা, যদি দুষ্কর্ম্ম ক’রে জেলে যেতে হয়। আমরা এই যে হাজার হাজার লোক, আমরা কি চুরি-ডাকাতি করেছি, না খুন-খারাপি করেছি? কোনখানে যদি সভা হয়, আর কেউ যদি সভায় যায় ত তার জেল হবে! ভাল কথা! রাজার মর্জ্জি! এইবার যদি পথে হাঁটতে কেউ হাঁচে কিংবা কাসে ত তার বেত-পেটা হবে!
—এ আবার কোন্দেশী আইন? যা তা আইন কর্লেই হ’ল?
—তা না হ’লে সরকারী ব্যবস্থার বাহাদুরী কি? এ-রকম জেলে যেতে আর অপমান কি? যারা বেরিয়ে আসে, তাদের গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে যায়। এই দেখ না—কত বড় বড় লোক জেলে গেল।
—তা হ’লে তুইও বড়লোক হ’লি?
—না-ই বা হলাম! বড় লোকের সঙ্গে ত জেলে ছিলাম।
পিসীমা চুপ ক’রে একটু ভাবলেন, তার পর বল্লেন,—দেশের অদৃষ্টে কি যে আছে, ভেবে পাই নে।
বিপিন বল্লে,—যাই থাক্, লোকের একটু চৈতন্য হয়েছে। একটু ঘা না খেলে কি মানুষের মনে লাগে? এখন তবু লোকে বুঝতে পার্ছে যে, অনেক কষ্ট স্বীকার না কর্লে দেশের মঙ্গল হবে না।