অনেক গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে, রেসের জন্য ভিড়। পিসীমা দেখলেন, তাঁদের গাড়ীর একটু দূরে একখানা বড় মোটর দাঁড়িয়ে রয়েছে, মোটর খোলা, ভিতরে একজন স্ত্রীলোক ব’সে। বয়স অল্প, বেশ সুন্দরী, কাপড়-চোপড় খুব দামী, চোখে নাকটেপা চসমা, মাথার চুল বব করা। পিসীমা ঠাহর ক’রে দেখে বললেন,—ওকে যে চেনা-চেনা মনে হচ্ছে! কুমু, তুই চিনিস্ ওকে?
কুমুদিনী বললেন,—চিনি বই কি পিসীমা! ও যে ইন্দুবালা, এখন মিসেস্ মজুমদার, ওরা চৌরঙ্গীতে বাড়ী ভাড়া ক’রে থাকে।
—তবে বুঝি আমার চোখের দোষ হয়েছে! ইন্দু ত ভাজনঘাটের মেয়ে, আইবুড়ো বেলা কতবার দেখেছি, কতবার আমাদের বাড়ী আস্ত, ওর মা’র সঙ্গে কত নক্স খেলেছি। তবে ওকে দেখেই চিন্তে পারলুম না কেন, বল ত?
কুমুদিনী একটু আম্তা আম্তা ক’রে বললেন,—পিসীমা, চুল কেটে ফেললে হয় ত মানুষের মুখ একটু বদলে যায়!
—এইবার বুঝতে পেরেছি! তাই ভাবছিলুম, চিনি-চিনি কর্ছি—অথচ চিনতে পার্ছি নে কেন? চুল কেটে ফেললে মুখ আর এক রকম হয়ে যায় কি না! আর ওর এক মাথা কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, চুলের মধ্যে মুখখানি যেন ছবিখানি আঁটা। আহা, ইন্দুর বুঝি বড় অসুখ করেছিল, অনেক দিন জ্বর হয়েছিল, তাই বুঝি ডাক্তারে চুল কেটে দিয়েছে? ডেকে জিজ্ঞাসা করব?
কুমুদিনী তাড়াতাড়ি বললেন,—না পিসীমা, রাস্তার মাঝখানে কাজ নেই; ওরা ত আমাদের মত নয়, কি জানি কি মনে করবে।
কুমুদিনীর মনে হচ্ছিল, তাঁর আর পিসীমার কপালে মস্ত ফোঁটা, সদ্য কালীঘাটের ফেরত; মিসেস্ মজুমদার রেসে যাবার জন্য ব্যস্ত,