রাজা ছিল না, চিরকাল থাকবেও না। সাহেবী ধরণ-ধারণ কত দিন হয়েছে বল দেখি? তার আগে কি রকম ছিল? মাথায় শামলা আর বুককাটা চাপকানেরও ত অনেক ছবি দেখেছি। ধর, কিছু দিন পরে এখানে চীন রাজ্য হ’ল, ইংরাজদের ত ঘরবাড়ী এখানে কিছু নেই, তল্পিতাল্পা বেঁধে তারা নিজের মুলুকে চ’লে গেল। তখন কি হবে? তখন কসাইটোলা গলির চীনে মুচিগুলো যে রাজার কুটুম হবে! কলেজে তাদের ভাষা পড়াবে, তাদের ভাষায় খবরের কাগজ ছাপা হবে, কলম ছেড়ে সব তুলি ধরবে। তখন আর সাহেব সাজবে কে? তখন সব চীনে কোট আর চীনে পায়জামা পরবে, ছুরী-কাঁটা ছেড়ে দুটো কাঠি ধর্বে, সৌখীন বাঙ্গালীর মেয়ে চীনে খোঁপা বেঁধে চীনেদের মেয়ের মত সাজবে! আর চীনেদের রান্না অমৃত লাগবে।
—ও পিসীমা, ওদের রান্নার কথাটা আর ব’লো না!
ছেলেরা সব ঘরে গড়াগড়ি দিয়ে হাস্তে লাগ্ল।
পিসীমার কথা বন্ধ হ’ল। উমা বড় মেয়ে, বাপের আদুরে, শ্বশুরঘর করে, একটু মুচকে হেসে বল্লে,—দিদিমা বাবার কাছ থেকে সব কথা জেনে নিয়েছেন, আর কিছু বাকী নেই!
বিশ্বনাথ বল্লেন,—ওঁর মুখেই আমরা কত কথা শিখি, ওঁকে আবার কে কি শেখাবে?
বিশ্বনাথ উঠে গেলেন। তখন চারদিকে কথার ফোয়ারা ছুট্ল। ব্রজনাথ বল্লে,—লেকচার শুন্তে হয় ত দিদিমার! আর সব লেক্চারে কি সব আজে-বাজে বকে!
পিসীমা বল্লেন,—নে, তুই আর জ্বালাস্ নে!
অন্য ছেলেরা বল্লে,—দিদিমা, তুমি আর দেশে যেও না, এইখানে থাক।