রাজরোষ
—১—
অপরাহ্ণকালে প্রয়াগ-সঙ্গমে বালুকাতটে বসিয়া প্রশান্ত-ললাট নির্গ্রন্থ নাথপুত্ত্র[১] শিষ্যদিগকে শিক্ষা দিতেছিলেন। তাঁহার সম্মুখে ও দুই পার্শ্বে পঞ্চাশ জন শিষ্য নীরবে বসিয়া, অবহিত চিত্তে তাঁহার উপদেশ শ্রবণ করিতেছিলেন। কয়েক জন গৃহস্থও উপস্থিত ছিলেন।
গুরু কহিতেছিলেন,—‘গ্রন্থি ইহ-সংসারে বন্ধন। অনেক প্রকার জটিল গ্রন্থিতে মানুষের স্বভাব আবদ্ধ, চিত্ত স্বচ্ছন্দে বিচরণ করিতে পারে না। এই সকল গ্রন্থি মোচন করিতে হইলে আয়াস ও সাধনার প্রয়োজন, কিন্তু তাহা ব্যতিরেকে মুক্তির উপায় নাই। যাহার চরণে শৃঙ্খল বদ্ধ, সে অনায়াসে পথ পর্য্যটন করিতে পারে না। এই ভার বহন করিয়া জীবনের দীর্ঘ পথ কেমন করিয়া অতিবাহিত করিবে? সংযম অভ্যাস কর—বাক্যে সংযম, চিত্তে সংযম, আহার-বিহারে সংযম। বাক্য শাণিত অস্ত্রের ন্যায়, সংযম না করিলে অপরের মর্ম্মে আঘাত করে। চিত্ত চঞ্চল অশ্বের ন্যায়, বল্গা সংযত না করিলে অপথে-কুপথে ধাবিত হইবে। আহারের জন্য ধরণী নানা সামগ্রী দান করে, অপর ভক্ষ্যের কি প্রয়োজন? মানুষ কি ব্যাঘ্র যে মাংস ভোজন করিবে? আর বিহার? সাধু-সঙ্গই বিহার।’
- ↑ নির্গ্রন্থ নাথপুত্ত্র প্রসিদ্ধ জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীর।