একজন গৃহস্থ প্রশ্ন করিল,—‘প্রভু, যাহারা সংসারে লিপ্ত, গৃহস্থ আশ্রমে রহিয়াছে, তাহাদের প্রতি কি আদেশ?’
—‘গৃহাশ্রমে ত সকলেই রহিয়াছে, কয়জন গৃহ পরিত্যাগ করিতে পারে? গৃহস্থের পক্ষেও যথাসাধ্য সংযম ব্যবস্থা। সংযম ত্যাগ করিলেই সমূহ বিপদ। এই যে সংসার, ইহা পর্ব্বতের পার্শ্বের ন্যায়,—অত্যন্ত পিচ্ছিল, গমনাগমনের পক্ষে বড় কঠিন। অসাবধান হইলেই পতন ও বিনাশ। কোন জীবের হিংসা করিবে না, পিপীলিকাকেও পদদলিত করিবে না।’
যমুনার কালো জলে অস্তমান সূর্য্যের রশ্মি জ্বলিতেছিল, সিতাসিত সঙ্গমে গঙ্গার শুভ্র, তীব্র স্রোত ও যমুনার অলস, মন্থর, কৃষ্ণ প্রবাহ লক্ষিত হইতেছিল। পূর্ব্বদিকের বাতাস, তাহা জলে ঠেকিয়া ছোট ছোট তরঙ্গ রচনা করিতেছে, যমুনার পারে হরিদ্-বর্ণ ক্ষেত্র। কিছু দূরে ঘাটে কয়েকটি নৌকা বাঁধা, নাবিকেরা নৌকায় কিংবা তীরে বসিয়া গল্প করিতেছে, গ্রামের বালক বালিকা বালুকায় খেলা করিতেছে।
দুই তিনখানি সজ্জিত রথ বেগে চালিত হইয়া যমুনাতীরে উপনীত হইল। ছয় জন উত্তম-বেশ-পরিহিত যুবক রথ হইতে অবতরণ করিয়া শিষ্যপরিবৃত গুরুর অভিমুখে হাস্য-কৌতুক করিতে করিতে আগমন করিলেন। সকলের অগ্রে যে-যুবক আসিতেছিলেন তাঁহার বেশ-ভূষার পারিপাট্য কিছু অধিক। উপবিষ্ট শ্রোতার মধ্যে একজন তাঁহাকে চিনিতে পারিয়া কহিল, ‘রাজা বিরূপাক্ষ!’ সে-নাম শুনিয়া সকলেই কিছু শঙ্কিত হইল। একা নাথপুত্ত্র বিচলিত হইলেন না, নবাগত যুবকদিগের প্রতি দৃষ্টিপাত না করিয়া যেমন মধুর গম্ভীরস্বরে উপদেশ দিতেছিলেন, সেইরূপ দিতে লাগিলেন।
রাজা বিরূপাক্ষের বয়স চব্বিশ বৎসর। দেখিতে সুপুরুষ, কিন্তু