বিলাসিতার আতিশয্যে চক্ষু কোটরগত, রক্তবর্ণ, মুখমণ্ডল শ্রীবিহীন। সাঙ্গোপাঙ্গও তদ্রূপ। বিরূপাক্ষ দুশ্চরিত্র, নিষ্ঠাশূন্য, নিষ্ঠুর, প্রজাপীড়ক, অত্যাচারী। নিকটে আসিয়া সঙ্গের এক ব্যক্তিকে ব্যঙ্গচ্ছলে জিজ্ঞাসা করিলেন,—‘ইহারা কে? এখানে কি করিতেছে?’
হয় ত সেই ব্যক্তি বিদূষক। মুখ গম্ভীর করিয়া কহিল,—পিতৃশ্রাদ্ধ করিতেছে। মধ্যস্থলে পুরোহিত বসিয়া মন্ত্রোচ্চারণ করিতেছে।’
আর একজন কহিল,—‘না হে, ইহারা নটের দল। আজ রাত্রে প্রেতপঞ্চাশিকা নাটক অভিনয় হইবে, তাহাই আবৃত্তি করিতেছে। এই শ্মশানভূমি তাহার উপযুক্ত স্থান।’
নাথপুত্ত্র মৌনাবলম্বন করিয়া অবনত মস্তকে বসিয়াছিলেন। রাজা তাঁহাকে লক্ষ্য করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—‘কে তুমি? ব্রাহ্মণ?’
গুরু মাথা তুলিয়া ধীর স্বরে কহিলেন,—‘আমি তোমার দাস।’
রাজা পারিষদদিগকে কহিলেন,—‘এই দেখ, এক রকম। কতকগুলা অনার্য্য এখানে বসিয়া কি পরামর্শ করিতেছে। আর এক দল হইয়াছে, দেখিয়াছ? মুণ্ডিত শির, মুণ্ডিত তুণ্ড, পীতবস্ত্র ধারণ করিয়া ভিক্ষাপাত্র-হস্তে ঘুরিয়া বেড়ায়।’
রাজার সঙ্গিগণ হাসিতে লাগিল। একজন কহিল,—‘জানি বই কি! তাহাদের গুরু শাক্যবংশীয় রাজপুত্র, উন্মাদ, বীভৎস আচার চণ্ডালের গৃহ হইতে অন্ন ভিক্ষা করে।’
যুবকেরা অট্টহাস্য করিয়া উঠিল। একজন হাসিতে হাসিতে কহিল,—‘রাজসুখের অপেক্ষা ভিক্ষাভোগ উত্তম, ইহাতে আর সন্দেহ কি! কিন্তু এই যে লোকগুলা, ইহারা কে? রাজদ্রোহী নয় ত?’
আবার হাস্যের তরঙ্গ উঠিল। বিদ্রূপ-বাক্য শুনিয়া নাথপুত্ত্র