রাজবংশের কয়েকজন বৃদ্ধও জীবিত, রাজ-বাটীতে বিরূপাক্ষ যথেচ্ছাচার করিতে পারিতেন না। উদ্যানে তাঁহাকে নিষেধ করিবার বা বুঝাইবার কেহ ছিল না। প্রমোদ-ভবনে কি হইত, রাজ-বাটীতে সংবাদ আসিত, কিন্তু রাজা বয়ঃপ্রাপ্ত হইয়াছেন, রাজ্যভার তাঁহার হস্তে, কে তাঁহাকে নিষেধ করিবে? রাজা কখন কখন রাজরাটীতে গিয়া মাতাকে প্রণাম করিয়া আসিতেন, অধিক কথাবার্ত্তা হইত না। রাজমাতা মনে করিতেন বিবাহ হইলে এরূপ উচ্ছৃঙ্খল থাকিবে না, এই ভাবিয়া তিনি পুত্ত্রের বিবাহ দিবার চেষ্টা করিতেছিলেন। পুত্ত্র অসৎসঙ্গে প্রমোদে মত্ত, বিবাহের জন্য কোনরূপ আগ্রহ ছিল না।
উদয়নের কথায় রাজা ক্রোধে জ্ঞানশূন্য হইয়াছিলেন। বাগানে ফিরিবার পথে আর কোন কথা হইল না। ‘দেখিয়াছ, কতকগুলা ভিখারীর সম্মুখে আমাকে অপমান করিল! উহারা দেশে দেশে ঘুরিয়া বেড়ায়, সর্ব্বত্র এই কথা রাষ্ট্র করিবে।’
প্রজ্বলিত অগ্নিতে ইন্ধন জোগাইবার লোক অনেক আছে, রাজার বয়স্যদিগের ত কথাই নাই। কেহ বলিল,—‘উদয়নকে বন্দী করা হউক,’ কেহ বলিল,—‘তাহাকে শূলে দেওয়া হউক।’ সঙ্গীদিগের মধ্যে একজনের একটু বিবেচনা ছিল। সে বলিল,—‘যদি উদয়নকে এখন শাস্তি দেওয়া হয় তাহা হইলে প্রজারা জানিতে পারিবে যে, একজন প্রধান সন্ন্যাসীকে বিদ্রূপ করা হইতেছে দেখিয়া সে আপত্তি করিয়াছিল। প্রজাদের মনের ভাব জান ত, সাধু-সন্ন্যাসীকে অপমান করিলে তাহারা ক্রোধে উন্মত্ত হইয়া উঠে। কিছু একটা কৌশল করিয়া উদয়নকে শিক্ষা দিতে হইবে।’
একজন ব্যঙ্গ করিয়া কহিল,—‘মন্ত্রী মহাশয় ত উপস্থিত রহিয়াছেন, তবে আর ভাবনা কি! মহাশয়, পরামর্শ দিন্।’