—৩—
সন্ন্যাসীদের সহিত কিছু দূর গমন করিয়া উদয়ন নগরে প্রবেশ করিলেন। নিজের গৃহে না গিয়া রাজবাটীর নিকটে আর-একটি প্রাসাদে প্রবেশ করিলেন। ইহাতেও রাজবংশীয়েরা বাস করেন। এ-বাটীতে উদয়নের সর্ব্বদা যাতায়াত ছিল। বাহির বাটীতে কাহাকেও না দেখিতে পাইয়া উদয়ন অন্তঃপুরে প্রবেশ করিলেন।
গৃহকর্ত্রী মহাশ্বেতা প্রকোষ্ঠদ্বারে বসিয়াছিলেন। উদয়নকে স্বাগত জিজ্ঞাসা করিয়া বসিতে বলিলেন। কহিলেন,—‘তুমি যে কর্ম্ম শিখিতেছিলে তাহার কি হইল?’
—‘শিক্ষা প্রায় শেষ হইয়াছে, এইবার কর্ম্ম আরম্ভ করিব।’
—‘পূর্ব্বে সকলে রাজকর্ম্মের চেষ্টা করিত। এখন রাজার নিকটে কর্ম্ম প্রার্থনা করিতে কে যাইবে?’
‘কেমন রাজা জানেন ত?’
—‘সে-কথায় কাজ নাই! হতভাগ্য রাজ্য, হতভাগ্য প্রজা!’
তাঁহাদের কথোপকথন হইতেছে এমন সময় একজন যুবতী রমণী আসিয়া মহাশ্বেতার পাশে দাঁড়াইলেন। রমণী সুন্দরী, মহাশ্বেতার ভগিনীর কন্যা, পিতৃমাতৃবিয়োগ হওয়াতে মাসীর কাছে থাকেন। মহাশ্বেতা কহিলেন,—‘তোমরা কথা কও, আমি গৃহদেবতার কর্ম্ম সারিয়া আসি।’ এই বলিয়া তিনি উঠিয়া গেলেন।
উদয়ন কহিলেন,—‘সুজাতা!’
সুজাতা কহিলেন,—‘কি?’
দুই জনে পরস্পরের প্রতি চাহিয়া দেখিতেছিলেন। উভয়েরই কিছু সঙ্কোচ, কিছু বাধার ভাব। দুই জনেই চক্ষু নত করিলেন।