ক্রোধে বিরূপাক্ষের সর্ব্বাঙ্গ জ্বলিয়া যাইতেছিল। কিন্তু ওঝার সম্মুখে সর্প ফণা তুলিয়া কি করিবে? প্রকাশ্যে রাজা কহিলেন,—‘কিছু দিন পরে হইলে ক্ষতি কি? ব্যস্ত হইবার কি প্রয়োজন?’
—‘সে কি কথা মহারাজ! শুভ কর্ম্মে কি বিলম্ব করিতে আছে? আপনি লজ্জার অনুরোধে এমন কথা বলিতেছেন।’
স্থির অথচ সতর্ক পুরোহিত পাশে দাঁড়াইয়াছিলেন। কহিলেন,—‘মগধরাজ যেরূপ আদেশ করিবেন, তাহাই হইবে।’
রাজা একবার পুরোহিতের দিকে আর একবার দূতের দিকে চাহিয়া বাক্শূন্য হইয়া রহিলেন। দূত অনুচরগণের সঙ্গে চলিয়া গেলেন। তখন রাজা মনোভাব গোপন করিবার চেষ্টা না করিয়া সক্রোধে পুরোহিতকে কহিলেন,—‘এ সমস্ত আপনাদের ষড়যন্ত্র।’
পুরোহিত কহিলেন,—‘ষড়যন্ত্র ত অসৎ কর্ম্মের জন্য করে। সদ্বংশে বিবাহের ব্যবস্থা করা কি অসৎ কর্ম্ম?’
—‘বিবাহ করা-না-করা, যে কোন সময় করা আমার ইচ্ছা। বিবাহ আমি করিব না।’
—‘মহারাজের ইচ্ছা; প্রতিশ্রুত হইয়া প্রত্যাখ্যান করিলে মগধরাজ কারণ জানিতে চাহিবেন।’
—‘আমাকে আপনি শাসাইতেছেন?’
—‘আমি দরিদ্র ব্রাহ্মণ, আমার সাধ্য কি মহারাজ! কিন্তু মগধরাজ রাজান্নে প্রতিপালিত পুরোহিত নহেন, এ-কথা আপনি কেমন করিয়া বিস্মৃত হইবেন?’
রাজা ক্রুদ্ধ হইয়া প্রাসাদ হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া পদব্রজে নগরে চলিলেন। তিনি একা যাইতেছেন দেখিয়া দুইজন ভল্লধারী রাজসৈনিক তাঁহার অনুবর্ত্তী হইল।