পাতা:রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৯৩১).pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প

 রাজা চীৎকার করিয়া উঠিলেন,—‘তোমরা আদেশ পালন করিবে, প্রশ্ন করিবার কে?’

 সৈনিক স্তব্ধ হইল। একজন পথিক কহিল,—‘আমরা জিজ্ঞাসা করিতে পারি, কি অপরাধে এই ব্যক্তিকে বন্দী করিতেছেন?’

 —‘তাহা হইলে তুমিও বন্দী হইবে।’

 পশ্চাৎ হইতে এক ব্যক্তি কহিল,—‘এমন রাজা না হইলে এমন বিচার করে কে? নগরসুদ্ধ লোককে বন্দী করিলেই ত হয়!’

 রাজা কহিলেন,—‘এ ব্যক্তি রাজদ্রোহী।’

 সৈনিকেরা উদয়নকে ধরিতে উদ্যত হইল। মাঝে আর কয়েকজন লোক আসিয়া পড়িল। একজন উদয়নের কানে কানে বলিতেছিল,—‘পশ্চাতে মহামায়ার মন্দির দেখিতে পাইতেছ না? মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ কর, সেখানে বন্দী করিবার আদেশ নাই।’ সে ব্যক্তি উদয়নকে পশ্চাৎদিকে ঠেলিতে লাগিল। মন্দিরের বৃহৎ দ্বার, তাহার পর প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। উদয়ন বেগে প্রাঙ্গণ পার হইয়া, মন্দিরে প্রবেশ করিয়া দেবীমূর্ত্তির সম্মুখে সাষ্টাঙ্গে পতিত হইলেন। কহিলেন,—‘আমি ভীত, আমি দেবীর শরণার্থী!’

 মন্দিরের প্রধান পুরোহিত পঞ্চপ্রদীপ হস্তে দাঁড়াইয়াছিলেন। দীর্ঘ, সৌম্যমূর্ত্তি, দীর্ঘকেশ, শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখশ্রী, কোমল গভীর স্বরে কহিলেন,—‘বৎস, আশ্বস্ত হও, অশরণকে শরণ দিবার জন্যই মা আছেন।’

 উদয়নকে কহিলেন,—‘রাজা মিত্রদলের সহিত সন্ন্যাসীকে অবমাননা করাতে আমি আপত্তি করিয়াছিলাম। এই অপরাধে তিনি আমাকে রাজদ্রোহী বলিয়া বন্দী করিতে আসিতেছেন।’

 —‘এখানে?’