পাতা:রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৯৩১).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প

কাহাকেও বন্দী করিতে পারে না। এ স্থান অভয়ার, ভীত ব্যক্তিকে তিনি অভয় দেন, শরণাগতকে শরণ দেন।’

 রাজা একেবারে মন্দিরের সোপানের উপর উঠিয়া, হস্তের অসি না নামাইয়া, তীব্র-রুক্ষ স্বরে কহিলেন,—‘ব্রাহ্মণ, পথ ছাড়! ভিতরে প্রবেশ করিব, দ্বার রুদ্ধ থাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিব!’

 জনতা শিহরিয়া উঠিল। পুরোহিত দুই বাহু উত্তোলন করিয়া, দুই হস্তে বক্ষের কাষায়-বস্ত্র ছিঁড়িয়া ফেলিয়া, রাজার তরবারির সম্মুখে প্রশস্ত বক্ষ পাতিয়া দিলেন। তূর্য্যধ্বনির ন্যায় কণ্ঠনিনাদে কহিলেন,—‘প্রথমে ব্রহ্মহত্যা কর, তাহা হইলে দেবীর দ্বার সহজে ভাঙ্গিতে পারিবে।’

 সমবেত জনসঙ্ঘ হাহাকার করিয়া উঠিল।—‘সর্ব্বনাশ হইল! সর্ব্বনাশ হইল’ বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল; অনেকে দুই হস্ত দিয়া শ্রবণ রোধ করিল, অনেকে মন্দিরের অভিমুখে ধাবিত হইল।

 সৈনিক দুই জন ভল্লে ভল্ল যোজনা করিয়া, পুরোহিতের সম্মুখে রাজার পথ রোধ করিয়া দাঁড়াইল। রাজা দন্তে দন্তে নিষ্পেষিত করিয়া কহিলেন,—‘তোমরাও রাজদ্রোহী, শূলে যাইবে।’

 —‘রাজদণ্ড মস্তকে পাতিয়া লইব, দেবীর অভিশাপের ভাগী হইতে পারিব না। দেবীর অপমান হইলে নগর ধ্বংস হইবে।’

 রাজা বিরূপাক্ষের ওষ্ঠে ফেন এবং ওষ্ঠ-প্রান্তে শোণিতবিন্দু দেখা দিল।

 প্রজাদিগকে পুরোহিত কহিলেন,—‘তোমাদের কোন চিন্তা নাই, তোমরা গৃহে ফিরিয়া যাও। দেবীর মর্য্যাদা তিনি স্বয়ং অক্ষত রাখিবেন।’

 প্রজারা চলিয়া গেল। তখন পুরোহিত রাজাকে কহিলেন,—