পাতা:রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প - নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত (১৯৩১).pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রথযাত্রা ও অন্যান্য গল্প

এখন শীর্ণ, রোগক্লিষ্ট মূর্ত্তি, মুখখানি ম্রিয়মাণ পদ্মের মত, চুল আলুথালু, কপালের উপর পড়িয়াছে, চক্ষু বসিয়া গেলেও উজ্জ্বল, হাতের শিরা দেখা যাইতেছে। শিয়রে বসিয়া অমৃতার দিদিমা, কপালে হাত বুলাইয়া দিতেছেন, চুল সরাইয়া মাথার পিছনে গুছাইয়া দিতেছেন। ঘরের মেঝেতে বসিয়া অমৃতার মা, তাঁহার পাশে তাঁহার ছোট জা।

 অমৃতার পিতা আপিসের পোষাক পরিয়া ঘরে প্রবেশ করিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া তাঁহার ভাদ্রবধু ঘোমটা টানিয়া দিলেন। অমৃতার দিদিমা শয্যা হইতে উঠিয়া পাশে দাঁড়াইলেন। যেখানে তিনি বসিয়াছিলেন, অমৃতার পিতা সেইখানে উপবেশন করিলেন। অমৃতা নিজের হাত তাঁহার হাতের উপর রাখিল। তিনি এক হাতে তাহার হাত ধরিয়া আর এক হাত তাহার মাথায় দিলেন।

 অমৃতা। বাবা, তুমি বেরুচ্ছ?

 বাবা। হাঁ মা। যদি পারি ত সকাল সকাল ফিরে আসব। তুমি এখন কেমন আছ?

 অমৃতা। এখন ভাল আছি। তোমার সকাল সকাল আসবার কি দরকার? (ঘড়ির দিকে চাহিয়া) দশটা বাজে, তুমি যাও, নইলে তোমার দেরী হবে।

 বাবা। এই যে যাই।

 তিনি উঠিয়া চলিয়া গেলেন। ভাদ্রবধূ ঘোমটা খুলিলেন। দিদিমা আবার অমৃতার শিয়রে বসিলেন।

 দিদিমা। অমী, এখন তোমার কোন কষ্ট নেই?

 অমৃতা। না, দিদিমা। আগে আমার গাঁটে গাঁটে যেন এঁটে বেঁধেছিল, ব্যথায় যেন ফেটে যাচ্ছিল। এখন যেন বাঁধন একে একে খুলে দিচ্চে, আর কোন যন্ত্রণা নেই।