পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

|ノ・ সমস্ত সমালোচকের পক্ষেই কোন কবির কাব্যকে তাহার সমগ্র-পুরুষীয় অনুভবের সহিত একান্বয়ে আলোচন করিবার সুযোগ সম্ভব নয় । কিন্তু কবির কাব্যকে যে কেবলমাত্র সেই কবিরই সমগ্র-পুরুষীয় অনুভবের সহিত একান্বয়ে আলোচন করিতে হইবে এমন কোনও দাবী ন্যায়সঙ্গত নহে । সাগরগর্ভসস্তৃতা লক্ষ্মীর পরিচয় যে কেবল সাগরেই পাওয়া যায় তাহা নহে, তাহার পরিচয় গৃহে গৃহে প্রত্যেকের হৃদয়ের পূজামন্দিরে। কবি যে পুষ্পকে তাহার মাল্য হইতে খসাইয়া দিলেন, তাহ তাহা হইতে সমুদ্ভূত হইলেও তাহা তাহার একান্ত নিজস্ব নহে, তাহা বিশ্বমানবের । প্রত্যেক মানুষের সমগ্র-পুরুষীয় অতুভবের সহিত একান্বয়ে তাহার এক একটি নূতন পরিচয় আছে, সেজন্যই কাব্যবিচারে এত মতভেদ । এই বিভিন্ন মতগুলি যতই পরস্পরবিরোধী হোক, তাহদের প্রত্যেকটিরই সেই সেই মানবহৃদয়ে একটি পরিস্ফুট স্থান আছে। কবির সমগ্র-পুরুষীয় অনুভবের সহিত যদি দৈবক্রমে তাহদের কোনও একটির মিলও থাকে, তথাপি তাহা জানিবার কোনও উপায় নাই । যদি জানাও যাইত তাহা হইলেও তাঁহাই যে সেই কাব্যের যথার্থ আলোচন, তাহা ও বলা ঘাইত না । কবির সমগ্র-পুরুষীয় ক্ষেত্র হইতে ব্যাপকতর ক্ষেত্রের সংস্পর্শে আসিলে কবির কাব্য আরও মহিমময় হইয়া আপনাকে প্রকাশ করিতে পারে। বকুলের ফুল বকুলতলায় যে সৌন্দর্ষ্য প্রকাশ করে, ভক্তের অর্ঘ্য লইয়া শিবলিঙ্গের উপবে তাহার প্রকাশ তা অপেক্ষা অধিক মহিমময় । কবির কাব্যরচনাই যে রচনা তাহা নয়, আলোচনও একটি মহতী রচনা। উভয়ের মধ্যে এইটিই প্রধান পার্থক্য, যে কবির রচনা দৃপ্ত বিষয় ও তাহার স্বকীয় অনুভবকে অবলম্বন করিয়া উৎপন্ন হয়, সমালোচকের রচনা উৎপন্ন হয় কবির কাব্যকে লইয়া। উভয়েরই উদ্ভূতি সমগ্র-পুরুষীয় অনুভব হইতে । সমালোচক যখন কবির কাব্য পড়েন, তখন কবির সমগ্র কাব্যের মধ্যে তাহার যে সমগ্র-পুরুষীয় অনুভবটি স্তরে স্তরে প্রকাশ লাভ করিয়াছে, সমালোচক সেই সমগ্র-পুরুষীয় অনুভবটির সহিত নিজের সমগ্র-পুরুষীয় অনুভবের পরিচয় করিবার চেষ্টা করেন।