পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২৬ রবি-দীপিত আনন্দের সহিত সম্মিলিত হইয়া যে তুমি-আমি একাকার হইয়া রহিয়াছি সেখানেও তাহা শেষ হইয়া যায় নাই। রূপ বাহিরের যবনিক মাত্র, অন্তরের নারীমূৰ্ত্তি যেখানে ধরা পড়ে না। কিন্তু নারী যেখানে পুরুষের সহিত সকল কৰ্ম্মে, সকল প্রচেষ্টায়—সকল উৎসবে আপনাকে দীক্ষিত করিয়া তাহার সহিত একাত্মবন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছে সে শুধু গৃহিণী নয়, সখী নয়। গৃহকৰ্ম্মে নারী সে পুরুষের সহযাত্ৰিণী, সহকর্মিণী—সহধৰ্ম্মিণী । তাহার সহিত সম্পর্ক কেবলমাত্র রূপ-সম্ভোগের মধ্যে নহে, অঙ্গহীন পরিণত স্নেহসারের মধ্যে নহে, তাহার সহিত সম্পর্ক সমগ্র জীবনের । প্রেমের একাত্ম-বন্ধনে নারী যেখানে পুরুষের সমব্রতধারিণী, পুরুষের আশা, গৰ্ব্ব, উৎসাহ, শৌৰ্য্য, বীৰ্য্য, ধৰ্ম্ম, যাহা কিছু পরমসাধু পরম প্রেয় ও পরমশ্ৰেয়ঃ আছে তাহারই যেখানে স্বাধিকার, সেখানেই নারীর যথার্থ মহিমা । সংস্কৃত সাহিত্যে যজ্ঞানুষ্ঠানে পত্নীর কৃত্য আছে সেই হিসাবে তাহাকে সহধৰ্ম্মিণী বা পত্নী বলা হয় । সে ছিল সেই যজ্ঞকালের দিনের কথা । কিন্তু যজ্ঞের কাল অতীত হইয়াছে, মানুষের কার্য্যক্ষেত্রের মধ্যে নারীকে আর কোন অংশ দেওয়া হয় নাই । যজ্ঞকার্য্যের সহধৰ্ম্মিণীত্ব যজ্ঞের সঙ্গেই শেয হইয়াছে। সেইজন্যই পরবর্তীকালের সংস্কৃত সাহিত্যে অধিকাংশ স্থলেই নারী নৰ্ম্মসহচরী, ভোগসঙ্গিনীরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে এবং তাহাতে তাহার যথার্থ মহিমা ক্ষুণ্ণ হইয়াছে। কিন্তু এই সুর যেন চিত্রাঙ্গদাতে আসিযাই কিছু কালের জন্য থামিয়া গিয়াছিল বলিয়া মনে হয় । “সোনার তরীতে” রবীন্দ্রনাথ ষেন পুরুষ ও নারীর কৰ্ত্তব্যের ও মিলনের ক্ষেত্রকে পৃথক করিয়া দিয়াছেন। সোনার তরীতে কবি বলিতেছেন— “পুরুষের দুইবাহু কিণাঙ্ক কঠিন সংসার সংগ্রামে সদা বন্ধন-বিহীন ; যুদ্ধ দ্বন্দ্ব যত কিছু নিদারুণ কাযে বহ্নিবাণ বজ্ৰসম সৰ্ব্বত্র স্বাধীন।