পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রসাহিত্যে কান্ত প্রেম ১২৯ পৃথিবীর দিকে নামিয়া আসিতেছে। ক্রমশঃ যেন তাহার অশরীরী বাণী রূপাভিমূৰ্ত্তি পরিগ্রহ করিতেছে। কাঁধর সমস্ত বাল্য-জীবনের প্রেমলীলা তাহার চক্ষুর উপর দিয়া ভাসিয়া যাইতেছে । শৈশবের প্রেমসঙ্গিনী তাহার অন্তরের অন্তরলক্ষ্মী হইয়া, গৌরবময়ী মহিষীর পদ অধিকার করিয়াছেন । যিনি খেলার সঙ্গিনী ছিলেন, তিনি মৰ্ম্মের গৃহিণী ও জীবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হইয়া উঠিয়াছেন। প্রীতি ও স্নেহের গভীর সঙ্গীততান অনন্ত বেদনা বহন করিয়া ষেন স্বর্ণবীণাতন্ত্রীকে সতত ঝঙ্কৃত করিতেছে! সেই সঙ্গীতে সেই গানের পুলকে কবির চিত্ত যেন কল্পলোকের দিকে প্রসারিত হইতেছে। সে বেদনার কোন ভাযা নাই, সে বাসনার কোন তৃপ্তি নাই, তাহা যেন সমুদ্রে ভাসিয়া চলিয়াছে। প্রিয়ার বক্ষে বক্ষ দিয়া তাহার অন্তর-রহস্ত তাহার হৃদয়লোকের মধ্য দিয়া গভীর হৃদয়-তন্ত্রীকে আঘাত দিয়া সঙ্গীত-গুঞ্জনের স্বষ্টি করিতেছে। নক্ষত্র যেমন কম্পিত শিখায় শিহরিয়া উঠে, কবির হৃদয় তেমনি শিহরিয়া উঠিতেছে। কল্পলেকের কল্পনাট নাবীর মূৰ্ত্তিতে দেখা দিয়াছে— সেই তুমি মূৰ্ত্তিতে দিবে কি ধরা! এই মৰ্ত্তভূমি পরশ করিবে রাঙা চরণের তলে ? অস্তরে বাহিরে বিশ্বে শূন্যে জলে স্থলে সৰ্ব্বঠাই হ’তে সৰ্ব্বময়ী আপনাবে করিয়া হরণ, ধরণীর একধারে ধরিবে কি একখানি মধুর মূরতি ? অন্ধকারের স্রোতের মধ্যে দৃষ্টিপথ যেন ক্ষীণ, বর্ণহীন অস্তিত্বের রেখাকে ডুবাইয়া দিয়া সেই স্পর্শের আবেগের মধ্যে আপনাকে হারাইয়া ফেলিতেছে। কবি মনে করিতেছেন যে এই কল্পমূৰ্ত্তি নারীর সহিত তাহার যখন চোখোচোখি হইবে তখন তিনি তাহাকে চিনিতে পারিবেন। সমস্ত নিদ্রিত অতীত নুতন চেতনা লাভ করিবে ।