পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রসাহিত্যে কাস্তা প্রেম X 8.N. তাই প্রাচীন মুক্তিপথে প্রেমিকের কোন উৎসাহ নাই। তিনি অনুভব করেন যে চিত্তধারার মুক্তি তাহার আপন ব্যাপক ধারাস্বভাবের মধ্যে। সে মুক্তির বন্ধন জৈবজীবনের শত সহস্র আবরণ ও আকর্ষণ । কিন্তু সেই ধারাস্বভাবের মধ্যে প্রেমের যে প্রচ্ছন্নমূৰ্ত্তি রহিয়াছে সেই মূৰ্ত্তি যদি আত্মপ্রকাশ ও আত্মপরিচয় লাভ করিতে পারে তাহা হইলে তাহার ধারাস্বভাব তাহার অাপন ক্ষুদ্র গণ্ডীর মধ্যে আবদ্ধ না থাকিয়া বিশ্বমৈত্রীতে জগন্ময় ব্যাপ্ত হইতে পারে। বিশ্বমৈত্রীর মুখে এই যে ব্যাপ্তি তাহাকেই বলে ব্রহ্মবিহার। মৈত্রী, করুণ, মুদিত ও উপেক্ষ এই চারিটি এই ব্রহ্মবিহাবের মধ্যে আপনাদের পরিচয় লাভ করে। যে আবরণ আমাদের চিত্তধারার স্বাভাবিক প্রসারকে রুদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে, সে আবরণ ভাঙ্গিবার উপায় সেই আবরণের মধ্যেই রহিয়াছে । জৈব আকর্ষণের বশে যখন আমরা রূপ-লালসায় নারীর দিকে আকৃষ্ট হই, তখন দৈহিক আবরণের মধ্য দিয়া প্রেম আপনাকে কামরূপে প্রকাশ করে । কিন্তু এই আবরণকে উপলক্ষ্য করিয়া প্রেম যতই প্রসার প্রাপ্ত হয়, ততই এই আবরণের বাধকে ভাঙ্গির দিয়া তাহা একটি আপ্লাবনের স্বষ্টি করে । এই আপ্লাবনের মধ্যেই আমরা নারীকে একদিকে যেমন আমাদের আত্মার অঙ্গীভূত, আত্মার সহিত একাত্মভূত বলিয়া অনুভব করিতে পারি, অপরদিকে তেমনি সেই আপ্লাবনের একাত্মীকরণের দ্বারা যুগযুগাস্তরের নরনারীর সহিত, স্থাবর-জগমের সহিত, গ্রহ-চন্দ্রের সহিত, আমাদের যে একটি সহজ নাড়ীর যোগ রহিয়াছে, সেই যোগকে অনুভব করিয়া প্রেম-প্রেরণার দ্বারা চিত্তধারাকে সৰ্ব্বতঃ প্রসারিত করিতে পারি। চিত্তধারার এই সৰ্ব্বত্র প্রসারণই আমাদের চিত্তের মুক্তি। একটি হৃদয়ের নিকট আমাদের সমস্ত আবরণ আমরা খণ্ড খণ্ড করিয়া ভাঙ্গিয়া দিতে পারি। আমাদের সমস্ত মোহ-অভিমান, পদগৰ্ব্ব, জাতিগৰ্ব্ব, সমাজ-সংস্থানের নানা গ্রস্থি-বন্ধনের সঙ্কীর্ণতাকে যদি খণ্ডিত করিয়া দিতে পারি তবে সেই আবরণভঙ্গের দ্বারা আমাদের সমস্ত হৃদয়গ্রন্থি উন্মুক্ত হইয়া যায়। উপনিষদে আছে— “ভিদ্যতে হৃদয়-প্রস্থিশিচ্ছাস্তে সৰ্ব্বসংশয়াঃ ক্ষীয়ন্তে চাস্ত কৰ্ম্মাণি তস্মিন দৃষ্টে পরাবরে ॥”