পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্রসাহিত্যে কান্ত প্রেম S85 তাহার কাছে দেহের আকর্ষণের সীমা কোন সঙ্কীর্ণতা আনিতে পারে না । আমাদের দেশের প্রাচীন দাশনিকরা অনেক সময়ে বলিয়াছেন যে, শুধু ইঞ্জিয়ের যে আনন্দ তাহাও যখন গভীর হইয়া উঠে, তখন তাহ ইন্দ্রিয়ের সীমাকে অতিক্রম করে। আমরা যাহাকে কাম বলি তাহ যখন অস্তরেরই আকর্ষণ তখন তাহ গভীর হইলে যে দেহের সীমাকে লঙ্ঘন করিবে তাহাতে বিস্ময়ের কোন কারণ নাই। কবি একদিকে উপলব্ধি করিয়াছেন যে, যুগল-প্রীতির মধ্যে বিশ্ব-চরাচরের আনন্দ এক হইয়া গিয়াছে এবং যুগল-মূৰ্ত্তি একলোলভাবাপন্ন হইয়াছে এবং অপরদিকে অনুভব করিয়াছেন যে নারী বাহিরের নহে ; অন্তরের পরিকল্পনা, অন্তরের আকর্ষণ, অন্তরের প্রেমই নারীরূপে বহির্জগতে প্রতিভাত হইয়াছে। কিন্তু প্রেমের এই অদ্বৈত তত্ত্বের মধ্যেই তাহার বিশ্রাম নহে, আলম্বন-উদ্দীপনবিভাবের ও নানা অনুভবের বিচিত্র বর্ণচ্ছটা আসিয়া সে বিশাল তরঙ্গের মধ্যে আপনাদের বিচিত্র বর্ণসত্ত্বায় প্রতিফলিত করিয়া তুলিয়াছে। বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে আমার নিভৃত নবজীবন পরে। প্রভাত কমল সম ফুটিল হৃদয় মম, কার দু'টি নিরুপম চরণ ভরে। জেগে উঠে সব শোভা, সব মাধুরী, পলকে পলকে হিয়া পুলকে পূরি’। কোথা হ'তে সমীরণ আনে নব জাগরণ পরাণের আবরণ মোচন করে । বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে। লাগে বুকে সুখে দুঃখে কত যে ব্যথা কেমনে বুঝায়ে কব না জানি কথা । আমার বাসনা আজি ত্রিভুবনে উঠে বাজি, কাপে নদী বনরাজি বেদনাভরে। বাজিল কাহার বীণা মধুর স্বরে।