পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কড়ি ও কোমল ১৩ ভাষা নেই বলেই কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতন জন্মান্তরবাদের রূপক আশ্রয় করেছেন। এ জন্ম হতে পূৰ্ব্বজন্ম, সেখান থেকে তৎপূৰ্ব্বজন্মে, এমি করে আমরা যতই জন্ম থেকে জন্মাস্তরে ভ্রমণ করি না কেন, কিছুতেই আমাদের অমৃতত্বের সন্ধান পাই না ; কারণ এই কল্পনার পথে যতই আমরা জন্ম হতে জন্মাস্তরে উড্ডীন হতে প্রয়াসী হই, আমরা সেই খণ্ডের মধ্যে, অস্তের মধ্যে, সীমার মধ্যে পড়ে থাকি। কারণ এ জন্ম যেমন সাস্ত, পূৰ্ব্বজন্মও তেমনি সাস্ত। একটি সাস্তের উপর বা একটি খণ্ডের উপর যতই সান্ত বা খণ্ড চাপাই না কেন, তাতে কখনই অনন্ত ও অখণ্ডের বোধ বা তৃপ্তি হতে পারে না। তার পাল্লা যতই লম্বা হোক, সে কেবল অস্ত থেকে অন্তে ছুটোছুটি। বাস্তবিক অসীমের যতটুকু বোধ বা প্রত্যয় আমাদের সম্ভব, সে কেবল এই চিচ্ছায়াপত্তির দ্বারাই সঙ্ঘটিত হতে পারে। যতক্ষণ বৃত্তি ও তার বহির্বিষয় নিয়ে মানুষ ব্যস্ত থাকে, ততক্ষণ অস্তরের চিদাভাসেব ছায়াপাত সত্ত্বেও কোনও অভিব্যঞ্জন হয় না । কিন্তু যখন বহির্বিশ্বের এই ক্রমসঞ্চারী পৰ্য্যায়ুধারায় মানুষের তৃপ্তি সম্পাদন করতে পারে না, তখন ভোগে বিরাগ উপস্থিত হয় এবং মিলনের পূর্ণতায় শ্মশানের রুদ্রদীপ্তি খ খ করতে থাকে। সীমার ভারে মন প্রপীড়িত হয়, তাই সে অসীমের অন্বেষণে প্রবৃত্ত হয়। সেই অবসরে যদি অনন্ত ও অসীমের প্রতিবিম্ব তার চক্ষুতে প্রতিফলিত হয়, তবে সেই অঞ্জনের অমৃতনিষেকে সে সমস্ত সীমার মধ্যে, সমস্ত খণ্ডতার মধ্যে, অসীমের বহুধা বিচিত্র আত্মবিকাশ উপলাভ করে ধন্য হয়। সমস্ত ক্ষুদ্রতা তার চোখে এক মুহূর্তে বৃহৎ হয়ে দাড়ায় । দুদিনের পার্থিব ভালবাসা বা আকর্ষণের মধ্যে জন্মজন্মান্তরের অনস্ত প্রেম ও অনস্ত মিলনের পরিচয় পেয়ে থাকে । আমাদের প্রাচীন বৈষ্ণব কবিদের আলোচনা করলে আমরা দেখতে পাই যে তারাও পার্থিব প্রেমের ভাষায় একটা অপার্থিব নিত্য প্রেমের বর্ণনা করেছেন। অগ্নিময়ী ভোগক্ষুধার সঙ্কেতে একটা অনন্ত বিরাট ক্ষুধার ছবি এঁকেছেন, ভোগের রক্তমাংস দিয়ে ভোগাতীতের মূৰ্ত্তি গড়েছেন, সীমার কুটিরে অসীমকে নিমন্ত্রণ করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন । সেই জন্যেই অনেক সময় রবীন্দ্রনাথের