পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 রবি-দীপিত কবিতার মধ্যে আমরা বৈষ্ণব কবিদের একটা ছায়া দেখতে পাই এবং রবীন্দ্রনাথের ভোগম্পর্শী বর্ণনার মধ্যে জয়দেব ও বিদ্যাপতির আভাস অনুভব করি । কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বিশেষত্ব এইখানে যে বৈষ্ণব কবিদের মধ্যে যেমন কেবল মাত্র একটা রূপকের সাহায্যে তত্ত্বটিকে পরিস্ফুৰ্ত্ত করবার চেষ্টা রয়েছে তার মধ্যে সে ভাবে সেটা প্রকাশ পায় নাই। সৌন্দৰ্য্যাকাঙ্ক্ষী প্রাণের যে বিশ্ব প্রসার আমরা তার মধ্যে প্রত্যক্ষ করি, সুন্দরের অন্বেষণে সমস্ত বিশ্ব পরিক্রম ক’রে যেমন একটা “নেতি নেতি” ধ্বনির সন্ধান পাই, বৈষ্ণর কবিদের মধ্যে তা পাওয়া যায় না। সেখানে যত স্মৃত্তি, যত অভিব্যক্তি, যত বিকাশ তা কেবল একটা রূপককে অবলম্বন করেই সংঘটিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের হৃদয় শতদল, ধীরে ধীরে লৌকিক থেকে অলৌকিকের দিকে ফুটে উঠেছে, একটি বিকাশের মধ্যে লোকদ্বয় বিধৃত হয়ে রয়েছে। অথচ বৈষ্ণব কবিদের মতন এই বিধারণ সিদ্ধস্বরূপে উপস্থাপিত না হয়ে, সৌন্দৰ্য্যসাধকের সাধন ব্যাপারের প্রাণময় ক্রিয়াময় তপস্যার মধ্যে স্তরে স্তরে পরিস্ফুট হয়েছে। বৈষ্ণব কবিরা একটা প্রাপ্ত বা স্বীকৃত তত্ত্ব মূৰ্ত্তিময় করেছেন। আর রবীন্দ্রনাথের কবিন্ধদয় একটা অপ্রাপ্তের সন্ধানে বহির্গত হয়ে, আকুল অন্বেষণে নানা পথে ভ্রমণ করে, শুধু প্রীতির বলে হিরন্ময় পাত্র উদঘাটন করে সুন্দরকে প্রত্যক্ষ করেছেন। র্তার কাব্যের মধ্যে আমরা বেদনাময় সৌন্দৰ্য্যলিপ্ত প্রাণের যেমন একটা জীবন্ত ইতিহাস দেখতে পাই বৈষ্ণব কবিদের মধ্যে তা পাওয়া যায় না। রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একটা ক্রিয়া, একটা ব্যাপার, একটা movement আছে, বৈষ্ণব কবিদের মধ্যে আছে দিব্য প্রেমের একটি মিগ্ধোজ্জল দীপশিখা । সে আলো রবীন্দ্রনাথের হৃদয়ের আগুনের মতন রাশীকৃত ধোয়ার মধ্য দিয়ে ফুৎকারে ফুৎকারে জলে ওঠে নি। আরতির ঘৃত প্রদীপের মতন কৃষ্ণপ্রেমের অগ্নিসংস্পর্শে একেবারেই তা জলে উঠেছে। তাই সেখানে ধোয়া ও কালোর চিহ্ন নাই। বেদনাতুর মানবহৃদয়ের স্থলন পতন ভয়ের তাড়না নাই, আছে কেবল একটি দিব্য আকাঙ্ক্ষার স্বচ্ছদীপ্তি ; ভোগাতীতের সঙ্গে মানুষের আত্মার যে একটি নিত্যসিদ্ধ সম্বন্ধ রয়েছে, সেইটিই সেখানে