পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফাল্গুনী ২৩ কোনও প্রাণ নেই ; এরা সব তারই অবয়বের মতন, তারই প্রাণের ছটায় এরা প্রাণবস্ত হয়ে রয়েছে। প্রতি বসন্তে এই প্রকৃতিসুন্দরীরই নবযৌবন ফুটে উঠেছে। সমস্ত মানুষকে নিয়েও যদি আমরা এমনি ক’রে একটা বিরাট প্রাণশক্তির বিপুল চেতনার সন্ধান করি, যদি মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে না দেখে, সমস্ত মানুষকে ব্যেপে যে একটা চৈতন্য পৰ্য্যাপ্ত হয়েছে, তাকে আমরা দেখতে পারি, তবে বুঝব যে শতদল পদ্মের যেমন সমস্ত দলগুলির বিকাশ নিয়ে একটি পদ্মের অথণ্ড বিকাশ, তেমনি সমস্ত মানুষকে নিয়ে বিশ্বের চিৎপদ্মের একটা অখণ্ড বিকাশ চলছে । সমষ্টিকে বাদ দিয়ে যখন খণ্ডভাবে ব্যক্তি হিসাবে আমরা এই ব্যাপারটিকে তথ্য সম্বন্ধে বিচার করতে যাই তখন তাদের পরম্পরের মধ্যে মিল বা সামঞ্জস্য রাখতে পারি না। দেখি যে, জবা মৃত্যুর এক একটা প্রকাণ্ড বিশ্বগ্রাসী গহবর একের থেকে অপরকে একেবারে তফাৎ ক’রে রেখেছে । কিন্তু সমস্ত প্রাণপৰ্য্যায়কে যদি একই প্রাণের বিকাশ ব’লে বুঝতে পারি, তবে আর তাদের ব্যক্তিগত জরামৃত্যুর ছায়া এসে আমাদিগকে আচ্ছন্ন করতে পারে না, একটা মানবপৰ্য্যায়ের মৃত্যুর পর নূতন পর্য্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়, আবার তাদের মৃত্যুর পর আর এক পর্য্যায় আসে, এমনি করে পর্য্যায়ের পর পর্য্যায়ের নব নব ধারা চলতে থাকে, কোথাও এর বিরাম নেই। জড় প্রকৃতির মতন চেতন প্রকৃতির মধ্যেও শীত বসন্তের ঋতুনীলা চলছে। নূতন জ্ঞান নূতন আশা নূতন আদর্শের রঙ্গীন পতাকা উড়িয়ে নবযৌবন এসে উপস্থিত হয়, আবার যেই সেটা জরার রুক্ষ বাতাসে মলিন হয়ে আসে অমনি মানুষ মৃত্যুর মানস সরোবরে স্বান ক’রে চ্যবন ঋষির মত র্তার থৌবনকে নূতন করে নেয়। কবি তার একথান। অপ্রকাশিত চিঠিতে লিখেছেন—“জীবনটা অমর বলেই তাকে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বারে বারে নবীন করে নিতে হয়। পৃথিবীতে জরাটা হচ্ছে পিছনের দিক, ওর সামনের দিকটা যৌবন। এই জন্য জগতে চারিদিকে যৌবনটাকেই দেখছি, আর জরাট যেন তার পিছনে স’রে স’রে যাচ্ছে । তাকে এই দেখচি তার পরক্ষণেই দেখচিনে । যেই শীতে সমস্ত ঝরে পড়ল অমনি দেখলুম শীত নেই, বসন্ত এসে পূর্ণ ক’রে