পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বলাক @> হয়তো ধরিয়া আমরা রূপের বাধনে বাধিয়া রাখি। আবার তাহাদের মধ্যে কত ংখ্য অগণিত অস্ফুট ভাবনা চিত্তের মধ্যে ক্ষণিক ঝঙ্কার দিয়া কোথায় কোন গহনে আপনাদিগকে হারাইয়া ফেলিয়াছে। আবার হয়তো কোন স্বদুৰ্বকালে কোন কবির কোন শিল্পীর স্থকৌশলে তাহাদের কেহ কেহ রূপের বাধনে ধরা পড়িয়া মূৰ্ত্তভাবে প্রকাশলাভ করিবে। সকল মানবের মধ্য দিয়াই একটি স্বষ্টিক্রিয়া চলিয়াছে। কোন আলোকের উদ্দেস্যে চিত্তের ভাব-যাত্রীদের তীর্থযাত্রা চলিয়াছে। সকলের মধ্যে এই একই ইতিহাস। এক কবির কাছে যাহা মূৰ্ত্তিলাভ করিল না, তাহা হয়ত সহস্ৰ শতাব্দী পরে অন্ত কবির নিকট মূৰ্ত্তিলাভ করিবে। চিরন্তনকালের মানবের মধ্যে এই যে চিরন্তনলীলা চলিয়াছে কালে কালে লোকে লোকে তাহারই অংশ বিশেষ চিত্রে ছন্দে গানে মূৰ্ত্তিলাভ করিয়া প্রত্যেকের মধ্যে অবস্থিত বিশ্বমানবের ঐক্যরূপটিকে সাক্ষাৎ করাইয়। (፳፪ ! মানুষ যখন আপন নগ্ন বাসনার তাড়নায় আপন আত্মস্বরূপকে বিস্কৃত হইয় তাহার অমৰ্য্যাদা করে, তখনও প্রকৃতির স্বষ্টির মূৰ্ত্তি পুষ্পবনে, পুণ্য সমীরণে, তৃণপুঞ্জে, পতঙ্গগুঞ্জনে, বসন্তের বিহঙ্গকুজনে, তরঙ্গচুম্বিততীরে মৰ্ম্মরিত পল্লব-বীজনে তাহার বাণী প্রচার করিয়া যায় । সন্ধ্যা তাপসীর হাতে জাল সপ্তর্ষির পূজাদীপমালা তাহাদের মত্ততার দিকে সারারাত্রি চাহিয়া থাকে এবং তাহার নিভৃত অস্তরের মধ্যে সাড়া দিতে চেষ্টা করে। জননীর স্নেহাশু, প্রণয়ীর অসীম বিশ্বাস, তাহদের বিদ্রোহ দগ্ধ ক্ষতবক্ষকে যেন গ্রাস করিয়া লয়, বিনিদ্র স্নেহের স্তন্ধ নিঃশব্দ বেদনাতে, সতীর পবিত্র প্রেমে, সখার হৃদয়-রক্তপাতে, সমস্ত বিশ্বের প্রেম তাহাদিগকে পবিত্র প্রায়শ্চিত্তবারিতে বিধৌত করে। আবার দেখি যখন এই প্রেমের সম্পদের ভারে অযোগ্য পাপী আপনার মধ্যে আপনি ভারাক্রান্ত হইয়া পড়ে এবং আত্মবোধিতে জাগ্রত হইতে অক্ষম হয় তখন প্রচণ্ড ঝঞ্জার বেশে গর্জমান বজ্রাগ্নিশিখায়, প্রলয়লেখনের রক্তবর্ষণে, সজঘাতের উদাম ঘর্ষণে নিষ্পেষিত হইয় তাহার একটি নূতন জাগরণের অবসর পায়।