পাতা:রবি-দীপিতা.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

한8 রবি-দীপিতা রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ কবিতাতেই দেখা যায় যে, জীবনের বাহিরে জীবনের যে অভিমান সেটা জন্মাস্তরের আকারেই হউক, কি পারলৌকিক কোন প্ৰেতদেহের মধ্য দিয়াই হউক, তাহাতে কোন উৎসাহ নাই। র্তাহার গানের প্রধান লীলাকেন্দ্র হইতেছে জীবনমৃত্যুর পবিত্র সঙ্গমতীর্থ। এই দেতে প্রাণ থাকিতে থাকিতেই অনেক মৃত্যুর মধ্য দিয়া আমাদের জীবনকে নবীন করিয়া লইতে হয়। দেহ বিচ্ছেদের পর একটা কেন্দ্রে জীবনের অবসান হয় বটে, কিন্তু তাহাতে জীবনের কোন শেষ নাই ; কোটী কোট দেহের মধ্য দিয়া জীবনধারা চলিয়াছে, একটি দেহের যখন অবসান হয়, তখন আবার নূতন দেহকে অবলম্বন করিয়া নূতন জীবনকেন্দ্র গড়িয়া উঠে। এমনি করিয়া ঝরা পাতার মত কত দেহ ঝরিয়া যাইতেছে, কিন্তু বিশ্বের অক্ষয় জীবনের যৌবন আবার নূতন নতন দেহ উৎপাদন করিতেছে এবং তাহার মধ্য দিয়া আপনার জীবনের খেলা খেলাইয়া চলিয়াছে। জীবনের বাহিরে কোথাও স্বর্গ নাই। জীবনের বাহিরে স্বর্গ খোজ ফাকা ফাঙ্কস খোঁজার তুল্য। আমাদের প্রেমে, আমাদের স্নেহে, ব্যাকুলতায়, লজ্জায়, মুখে দুঃখে, জন্মমৃত্যুর তরঙ্গে, নিত্য নবীন রংএর ছটায় স্বৰ্গ আমাদেরই মধ্যে জন্ম নিয়াছে। আকাশ ভরা আনন্দে তার ঠিকানা আমরা পাই, দিগঙ্গনার অঙ্গনে তারই শঙ্খ বাজে, সপ্তসাগর তারই বিজয়-ডস্ক বাজায় । স্বর্গ যে মাটির মায়ের কোলে জন্ম নিয়াছে, বনের পাতায় ঝর্ণাধারায় তাহারই সমারোহ চলিয়াছে এবং তাহারই আনন্দ-কল্লোলে তাহারই ধ্বনি শোনা ষায় । আর একটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন, “এই দেহটির ভেলা নিয়ে দিয়েচি সাতার গো, এই দু’দিনের নদী হব পার গো । তার পরে যেই ফুরিয়ে যাবে বেলা, ভাসিয়ে দেব ভেলা । তার পরে তার খবর কি যে ধারিনে তার ধার গো, তার পরে সে কেমন আলো, কেমন অন্ধকার গো ।”