পাতা:রবীন্দ্রনাথ - অজিতকুমার চক্রবর্তী (১৯৬০).pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নবযৌবনের আরম্ভে অন্তরে যখন হৃদয়াবেগ প্রবল হইয়া উঠিতেছে অথচ বিশ্বজগতের সহিত তাহার যথোচিত যোগ ঘটিতেছে না, হৃদয়ের অনুভূতির সহিত জীবনের অভিজ্ঞতার যখন সামঞ্জস্য হয় নাই, তখন নিজের মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থার যে অধীরতা তাহাই ‘সন্ধ্যাসংগীতে’র কবিতার মধ্যে ব্যক্ত হইবার চেষ্টা করিয়াছে।

 মোহিতবাবু তাঁহার সম্পাদিত কাব্যগ্রন্থে এই শ্রেণীর কবিতার “হৃদয়ারণ্য” নাম দিয়াছিলেন। আবেগগুলা সত্য হইলেও বাস্তব জগতে তাহাদের কোনো অধিকার ছিল না বলিয়া তাহারা বাড়াবাড়ির মধ্যে প্রকাশ পাইবার চেষ্টা করিতেছিল, অসুস্থ মূর্তি ধারণ করিতেছিল। প্রায় কবিতার নাম হইতে তাহা বুঝা যায়—“আশার নৈরাশ্য”, “সুখের বিলাপ”, “তারকার আত্মহত্যা”, “দুঃখ আবাহন” ইত্যাদি। কেবল কান্না:

বিরলে বিজন বনে বসিয়া আপন মনে
ভূমি-পানে চেয়ে চেয়ে, একই গান গেয়ে গেয়ে,
দিন যায়, রাত যায়, শীত যায়, গ্রীষ্ম যায়,···
বসিয়া বসিয়া সেথা বিশীর্ণ মলিন প্রাণ
গাহিতেছে একই গান, একই গান, একই গান।

 অথচ আশ্চর্য এই যে, ইহারই মধ্যে ভিতরে ভিতরে আর-একটা বেদনা ছিল, এবং ইহার বিরুদ্ধে একটা সংগ্রাম ছিল— আপনার সেই প্রথম বাল্যকালের সহজ সুন্দর ভাবের মধ্যে প্রবেশ করিবার জন্য, বিশ্বপ্রকৃতির মধ্যে সেইরকম আনন্দিত হইবার জন্য, আপনার ‘সুকুমার আমি’কে আবার ফিরিয়া পাইবার জন্য। “পরাজয়সংগীত”, “আমিহারা” প্রভৃতি কবিতা হইতে তাহা স্পষ্টই বুঝিতে পারা যায়:

২৯