বন্ধনকে স্বীকার করিতে হইবে এবং আধ্যাত্মিক জীবন যাপন করিতে গেলে সংসার ত্যাগ করিয়া সন্ন্যাসী হইতে হইবে। এই দুই কী উপায়ে মিলিতে পারে এবং সমস্ত দেশ এই দুইকে সম্মিলিত করিবার সাধনার দ্বারা কিরূপে বলিষ্ঠ হইয়া পুনরায় জাগ্রত হইতে পারে তাহা দেশের চক্ষের সামনে কবি প্রাণপণে ধরিবার চেষ্টা করিয়াছেন।
সুতরাং যাঁহারা মনে করেন যে, তাঁহার তপোবন-রচনার কল্পনা সংসারবিমুখতার নামান্তর, তাঁহারা ভারতবর্ষের আদর্শকে কবি কী চক্ষে দেখেন তাহা ভালো করিয়া বুঝিতে পারিয়াছেন বলিয়া মনে হয় না। এই বিদ্যালয় সম্বন্ধেও তাই তাঁহারা কতগুলি অমূলক কল্পনাকে মনের মধ্যে পোষণ করিয়া ইহার প্রতি যথোচিত শ্রদ্ধা রক্ষা করেন নাই এবং ইহার কাজকে অগ্রসর করিয়া দেবার জন্য অণুমাত্রও চেষ্টা করেন নাই।
কবির “তপোবন” নামক একটি প্রবন্ধ হইতে কিয়দংশ উদ্ধৃত করিয়া দিলেই আশ্রমপ্রতিষ্ঠার সময়ে কী আদর্শ যে তাঁহার মনের মধ্যে কাজ করিয়াছিল তাহা পরিস্ফুট হইবে:
‘ভারতবর্ষ যে সাধনাকে গ্রহণ করেছে সে হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে চিত্তের যোগ, আত্মার যোগ, অর্থাৎ সম্পূর্ণ যোগ। কেবল জ্ঞানের যোগ নয়, বোধের যোগ।··· অতএব আমরা যদি মনে করি ভারতবর্ষের এই সাধনাতেই দীক্ষিত করা ভারতবাসীর শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত তবে এটা মনে স্থির রাখতে হবে যে, কেবল ইন্দ্রিয়ের শিক্ষা নয়, কেবল জ্ঞানের শিক্ষা নয়, বোধের শিক্ষাকে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান স্থান দিতে হবে। অর্থাৎ, কেবল কারখানার দক্ষতা-শিক্ষা নয়, স্কুলকালেজে পরীক্ষায় পাস করা নয়, আমাদের যথার্থ শিক্ষা তপোবনে; প্রকৃতির সঙ্গে মিলিত হয়ে, তপস্যার দ্বারা পবিত্র হয়ে। আমাদের স্কুল-কালেজেও তপস্যা আছে, কিন্তু সে মনের তপস্যা, জ্ঞানের তপস্যা।
৯৭