পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ぬ8 , রবীন্দ্র-রচনাবলী বাজারের মধ্যে, রাস্ত গলির মধ্যে থাকিয় দুই দণ্ড কি মুক্ত বায়ু সেবন করিতে আসিব না ? আমরা জানি যে, যেখানে সীমা আরম্ভ সেইখানেই আমাদের কাজকৰ্ম্ম যুঝাযুঝি ও অসীমের দিকে আমাদের বিশ্রামের স্থল আছে, সেই দিকেই কি আমরা মাঝে মাঝে নেত্র ফিরাইব না? সে অসীমের দিকে চাহিলে যে অবিমিশ্রিত মুখ হয় তাহ নহে, কোমল বিষাদ মনে আসে। কারণ, সেদিকে চাহিলে আমাদের ক্ষুদ্রতা আমাদের অসম্পূর্ণতা চোখে পড়ে, সংশয়ান্ধকারে আচ্ছন্ন প্রকাও রহস্তের মধ্যে নিজেকে রহস্য বলিয়া বোধ হয়—সে রহস্য ভেদ করিতে গিয়া হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসি । সমুদ্রে সাতার দিতে ইচ্ছা হয়, অথচ তাহা আমাদের সাধ্যের অতীত ! অনেক উপকুলবাসী চিরজীবন এই উপকূলের কোলাহলে কাটাইয়াছেন, অথচ এই সমুদ্র-তীরে আসেন নাই, সমুদ্রের বায়ু সেবন করেন নাই। তাহাদের হৃদয় কখন স্বাস্থ্য লাভ করে না । হৃদয়কে এই সমুদ্র-তীরে আনয়ন করা, এই সমুদ্রের বক্ষে ভাসমান করা ভাবগত কবিতার কাজ । ভাবগত কবিতায় হৃদয়ের স্বাস্থ্য সম্পাদন করে। ইন্দ্রিয়জগৎ হইতে মনকে আর এক জগতে লইয়া যায়। দৃশ্যমান জগতের সহিত সে জগতের সাদৃশ্য থাকুক্‌ বা না থাকুক্‌ সে জগৎ সত্য জগৎ, অলীক জগৎ নহে । ভাবুক লোক মাত্রেই অনুভব করিয়াছেন যে, আমরা মাঝে মাঝে এক প্রকার বিষন্ন সুখের ভাব উপভোগ করি, তাহা কোমল বিষাদ, অপ্রখর সুখ । তাহ আর কিছু নয়, সীমা হইতে অসীমের প্রতি নেত্রপাত মাত্র। কোন কোন সময়ে আমাদের হৃদয়ে ঐ প্রকার ভাবের আবির্ভাব হয়, তাহা আলোচনা করিয়া দেখিলেই উক্ত বাক্যের সত্যতা প্রমাণ হইবে । জ্যোৎস্না-রাত্রে, দূর হইতে সঙ্গীতের স্বর শুনিলে, মুখস্পর্শ বসন্তের বাতাস বহলে, পুষ্পের ভ্রাণে আমাদের হৃদয় কেমন আকুল হইয় উঠে, উদাস হইয়া যায়। কিন্তু জ্যোৎস্না, সঙ্গীত, বসন্ত-বায়ু, স্বগন্ধের ন্যায় মুখসেব্য পদার্থের উপভোগে আমাদের হৃদয় আমন আকুল হয় কি কারণে ? কেন, সুমিষ্ট দ্রব্য আহার করিলে বা স্বস্নিগ্ধ জলে স্নান করিলে ত আমাদের মন ঐরুপ উদাস ও আকুল হইয়া উঠে না! যখন আহার করি তখন স্বস্বাদ ও উদর-পূৰ্ত্তির মুখমাত্র অনুভব করি, আর কিছু নয়। কিন্তু জ্যোৎস্না-রাত্রে কেবলমাত্র যে নয়নের পরিতৃপ্তি হয় তাহা নহে, জ্যোৎস্নায় একটা কি অপরিস্ফুট ভাব মনে আনয়ন করে। যতটুকু সম্মুখে আছে কেবল ততটুকু মাত্রই যে উপভোগ করি তাহা নহে, একটা অবর্তমান রাজ্যে গিয়া পৌছাই । তাহার কারণ এই যে, জ্যোৎস্না উপভোগ করিয়া আমাদের তৃপ্তি হয় না। চারিদিকে । জ্যোৎস্না দেখিতেছি অথচ জ্যোৎস্না আমরা পাইতেছি না । ইচ্ছা করে, জ্যোংস্কাকে আমরা সৰ্ব্বতোভাবে উপভোগ করি, জ্যোৎস্নাকে আমরা আলিঙ্গন করি, কিন্তু