পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৪ রবীন্দ্র-র তোমরা এমন কথাও বলিতে পারিতে যে তোমাদের দেশে আমাদের মত এমন সঙ্গীতচর্চা ও চিত্রশিল্পের আদর এখনো হয় নাই অতএব তোমাদের কোন কথাই শুনিতে চাহি না । ইহা অপেক্ষা বলা ভাল “আমার ইচ্ছা আমি শুনিব না ।” তাহাতে তোমাদেরও কথা অনেকটা সংক্ষেপ হইয়া আসে। কিন্তু তোমাদের জাতির মধ্যেই তোমাদের অপেক্ষা আরো উচ্চ বিচারশালা আছে সেই জন্যই আমরা আশা ত্যাগ করি নাই এবং সেই জন্যই আমাদের কনগ্রেস। যদিও আমার এ সকল কথা তোমাদের কর্ণগোচর হইবার কোন সম্ভাবনা নাই ; কারণ আমাদের সমাজের মঙ্গলের প্রতি তোমাদের অত্যন্ত প্রচুর অনুরাগ সত্ত্বেও আমাদের ভাষা তোমরা জান না, জানিতে ইচ্ছাও কর না ; তথাপি দুরাশায় ভর করিয়া আমাদের কনগ্রেসের প্রতি তোমাদের অকারণ অবিশ্বাস দূর করিবার জন্য মাঝে হইতে তৎসম্বন্ধে এতটা কথা বলিলাম। দেখাইলমি তোমাদের প্রতি ভক্তিই কনগ্রেসের একমাত্র অাশা ও সম্বল । অতএব কনগ্রেসের নিকট হইতে যে প্রস্তাব উত্থাপিত হইতেছে তাহার প্রতি এমন ভ্ৰকুটি করিয়া থাকা তোমাদের বিবেচনার ভুল। তাহার প্রতি প্রসন্ন কর্ণপাত করা রাজনৈতিক ধৰ্ম্মনৈতিক সকল প্রকার কারণে তোমাদের কৰ্ত্তব্য। কারণ কনগ্রেস জেতৃ ও জিতজাতির মধ্যে সেতুবন্ধন করিয়া দিতেছে। গবর্মেণ্টের দ্বারা মন্ত্রিনিয়োগ অপেক্ষ সাধারণ লোকের দ্বারা মন্ত্রি অভিষেক অনেক কারণে আমাদের নিকটে প্রার্থনীয় মনে হয় । পূর্বেই বলিয়াছি সন্তোষ একটি প্রধান কারণ। আমাদের শিক্ষিতমণ্ডলী এই অধিকার প্রার্থনা করিতেছে । যদি ইহা দান করিলে গবর্মেন্টের কোন ক্ষতি না হয় ত প্রজারঞ্জন একটা মহৎলাভ । গবর্ণমেণ্ট শব্দটা শুনিবামাত্র হঠাং ভ্রম হয় যেন তাহা মানবধৰ্ম্মবিবর্জিত নিগুৰ্ণ পদার্থ ! যেন তাহ রাগদ্বেষবিহীন ; যেন তাহা স্তবে বিচলিত হয় না, বাহ চাক্‌চিক্যে ভোলে না, যেন তাহার আত্মপর বিচার নাই, যেন তাহা নিরপেক্ষ কটাক্ষের দ্বারা মন্ত্রবলে মানব-চরিত্রের রহস্য ভেদ করিতে পারে। অতএব এরূপ অপক্ষপাতী সৰ্ব্বদশী অলৌকিক পুরুষের হস্তেই নির্বাচনের ভার থাকিলেই যেন ভাল হয় । কিন্তু আমরা নিশ্চয় জানি গবর্ণমেণ্ট আমাদেরি ন্যায় অনেকটা রক্তে মাংসে গঠিত। উক্ত গবৰ্ণমেণ্ট নিমন্ত্রণে যান, বিনীত সম্ভাষণে আপ্যায়িত হন, লনটেনিস খেলেন, মহিলাদের সহিত মধুরালাপ করেন এবং অধম আমাদেরি মত সামাজিক স্তুতিনিন্দায় বহুল পরিমাণে বিচলিত হইয়া থাকেন।