পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/২২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঔপনিষদ ব্রহ্ম • ( মুখ্যবস্তু নহে। সে যাহা ভোগ করে তাহা ঈশ্বরের দান বলিয়া ভোগ করে—সেই ভোগে সে ধৰ্ম্মের সীমা লঙ্ঘন করে না—নিজের ভোগমত্ততায় পরকে পীড়া দেয় না । সংসারকে যদি ঈশ্বরের দ্বারা আবৃত না দেখি, সংসারকেই যদি একমাত্র মুখ্য লক্ষ্য বলিয়া জানি তবে সংসারমুখের জন্য আমাদের লোভের অস্ত থাকে না, তবে প্রত্যেক তুচ্ছ বস্তুর জন্য হানাহানি কাড়াকড়ি পড়িয়া যায়, দুঃখ হলাহল মথিত হইয়া উঠে । এই জন্য সংসারীকে একান্ত নিষ্ঠার সহিত সৰ্ব্বব্যাপী ব্রহ্মকে অবলম্বন করিয়া থাকিতে হইবে—কারণ সংসারকে ব্রহ্মের দ্বারা বেষ্টিত জানিলে এবং সংসারের সমস্ত ভোগ ব্রহ্মের দান বলিয়া জানিলে তবেই কল্যাণের সহিত সংসারযাত্রা নিৰ্ব্বাহ সম্ভব হয়। পরের শ্লোকে বলিতেছেন :– কুৰ্ব্বন্নেবেহ কৰ্ম্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ এবং ত্বয়ি নান্যথেতোহস্তি ন কৰ্ম্ম লিপ্যতে নরে । কৰ্ম্ম করিয়া শত বৎসর ইহলোকে জীবিত থাকিতে ইচ্ছা করিবে, হে নর, তোমার পক্ষে ইহার আর অন্যথা নাই, কৰ্ম্মে লিপ্ত হইবে না এমন পথ নাই । কৰ্ম্ম করিতেই হইবে এবং জীবনের প্রতি উদাসীন হইবে ন!—কিন্তু ঈশ্বর সর্বত্র আচ্ছন্ন করিয়া আছেন ইহাই স্মরণ করিয়া কৰ্ম্মের দ্বারা জীবনের শতবর্ষ যাপন করিবে । ঈশ্বর সর্বত্র আছেন অনুভব করিয়া ভোগ করিতে হইবে এবং ঈশ্বর সর্বত্র আছেন অতুভব করিয়া কৰ্ম্ম করিতে হইবে । -- সংসারের সমস্ত কৰ্ত্তব্য পরিত্যাগ করিয়া কেবল ব্রহ্মে নিরত থাকা তাহাও ঈশোপনিষদের উপদেশ নহে— অন্ধং তম: প্রবিশন্তি যে অবিদ্যামুপাসতে । । ততো ভূয় ইব তে তমে য উ বিদ্যায়াং রতাঃ । যাহারা কেবলমাত্র অবিদ্যা অর্থাৎ সংসারকৰ্ম্মেরই উপাসনা করে তাহারা অন্ধতমসের মধ্যে প্রবেশ করে—তদপেক্ষ ভূয় অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করে যাহারা কেবলমাত্র ব্রহ্মবিদ্যায় নিরত । ঈশ্বর আমাদিগকে সংসারের কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মে স্থাপিত করিয়াছেন। সেই কৰ্ম্ম যদি আমরা ঈশ্বরের কৰ্ম্ম বলিয়া না জানি, তবে পরমার্থের উপরে স্বার্থ বলবান হইয়া উঠে এবং আমরা অন্ধকারে পতিত হই । অতএব কৰ্ম্মকেই চরম লক্ষ্য করিয়া কৰ্ম্মের উপাসনা করিবে না, তাহাকে ঈশ্বরের আদেশ বলিয়া পালন করিবে । কিন্তু বরঞ্চ মুগ্ধভাবে সংসারের কৰ্ম্ম নিৰ্ব্বাহও ভাল তথাপি সংসারকে উপেক্ষা