পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উমালোচনা S(t জগৎ সত্য। যাহা হউক দেখা যাইতেছে, সবই একাকার হইয়া পড়ে, জগৎটা না থাকিবার মতই হইয়া আসে। যাহা দেখিতেছি তাহা যে তাহাই নহে ইহাই ক্রমাগত মনে হয়। এই জন্যই জগৎকে কেহ কেহ মিথ্যা বলেন । কিন্তু আর এক রকম করিয়া জগৎকে হয়ত সত্য বলা যাইতে পারে। f সত্য যাহা তাহা অদৃশু, তাহা কখন ইন্দ্রিয়গ্রাহ নহে, তাহা একটা ভাব মাত্র। কিন্তু ভাব আমাদের নিকট নানারূপে প্রকাশ পায়, ভাষা আকারে, অক্ষর আকারে, বিবিধ বস্তুর বিচিত্র বিন্যাস আকারে । তেমনি প্রকৃত জগৎ যাহা তাহা অদৃশ্য, তাহা কেবল একটি ভাব মাত্র, সেই ভাবটি আমাদের চোখে বহির্জগৎব্রুপে প্রকাশিত হইতেছে। যেমন, যাহা পদার্থ নহে যাহা একটি শক্তি মাত্র তাহাকেই আমরা বিচিত্র বর্ণরূপে আলোকরূপে দেখিতেছি ও উত্তাপরূপে অনুভব করিতেছি, তেমনি যাহা একটি সত্যমাত্র তাহাকে আমরা বহির্জগংরূপে দেখিতেছি । একজন দেবতার কাছে হয়ত এ জগং একেবারেই অদৃশু, তাহার কাছে আকার নাই, আয়তন নাই, গন্ধ নাই, শব্দ নাই, স্পর্শ নাই, তাহার কাছে কেবল একটা জানা আছে মাত্র। একটা তুলনা দিই। তুলনাটা ঠিক না হউক একটুখানি কাছাকাছি আসে। আমার যখন বর্ণপরিচয় হয় নাই, তখন যদি আমার নিকটে একখানা বই আনিয়া দেওয়া হয়—তবে সে বইয়ের প্রত্যেক অঁাচড় আমার চক্ষে পড়ে, প্রত্যেক বর্ণ আলাদা আলাদা করিয়া দেখিতে পাই ও সমস্তটা অনর্থক ছেলেখেলা মনে করি । কিন্তু যখন পড়িতে শিখি, তখন আর অক্ষর দেখিতে পাই না। তখন বস্তুতঃ বইটা আমার নিকটে অদৃশু হইয়া যায়, কিন্তু তখনি বইটা যথার্থত: আমার নিকটে বিরাজ করিতে থাকে। তখন আমি যাহা দেখি তাহা দেখিতে পাই না, আর একটা দেখিতে পাই । তখন আমি বস্তুতঃ দেখিলাম, গ-য়ে আকার ছ ( গাছ ), কিন্তু তাহা না দেখিয়া দেখিলাম একটা ডালপালা-বিশিষ্ট উদ্ভিদ পদার্থ। কোথায় একটা কালো আঁচড় আর কোথায় একটা বৃহৎ বৃক্ষ ! কিন্তু যতক্ষণ পৰ্য্যন্ত না আমরা বুঝিয়া পড়িতে পারি ততক্ষণ পৰ্য্যন্ত ঐ আঁচড়গুলা কি সমস্তই মিথ্যা নহে ! যে ব্যক্তি শাদা কাগজের উপরে হিজিবিজি কাটে তাহাকে কি আমরা নিতান্ত অকৰ্ম্মণ্য বলিব না । কারণ অক্ষর মিথ্যা । আমার একরূপ অক্ষর আর-একজনের আর-একরূপ অক্ষর ৷ ভাষা মিথ্যা । আমার ভাষা এক তোমার ভাষা আর-এক । আজিকার ভাষা এক কালিকার ভাষা আর-এক। এ ভাষায় বলিলেও হয় ও ভাষায় বলিলেও হয় । গাছ বলিয়া একটা আওয়াজ শুনিলে আমি