পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 {} রবীন্দ্র-রচনাবলী কম ; একটুখানি আলোক অনেকটা অন্ধকারের মুখপাতের স্বরূপ । তেমনি আমাদের মনেও একটুখানি চৈতন্যের সহিত অনেকখানি অচেতনতা জড়িত রহিয়াছে। জগতেও তাহাই । জগৎ একটি প্রকাগু গোলাকার কুঁড়ি, তাহার মুখের কাছটুকুতে একটুখানি চেতনা দেখা দিয়াছে! সেই মুখটুকু যদি উদ্ধত হইয়া বলে আমি মস্তলোক, জগৎ অতি নীচ, উহার সংসর্গে থাকিব না, আমি আলাদা হইয়া যাইব, তবে সে কেমনতর শোনায় ? মৃত্যু | ধৰ্ম্মকে আশ্রয় করিলে মৃত্যুভয় থাকে না। এখানে মৃত্যু অর্থে ধ্বংসও নহে, মৃত্যু অর্থে অবস্থাপরিবর্তনও নহে, মৃত্যু অর্থে জড়তা। অচেতনতাই অধৰ্ম্ম । ধৰ্ম্মকে যতই আশ্রয় করিতে থাকিব, ততই চেতনা লাভ করিতে থাকিব, ততই অনুভব করিতে থাকিব, যে মহা-চৈতন্যে সমস্ত চরাচর অনুপ্রাণিত হইয়াছে, আমার মধ্য দিয়া এবং আমাকে প্লাবিত করিয়া সেই চৈতন্যের স্রোত প্রবাহিত হইতেছে। যথার্থ জগৎকে জ্ঞানের দ্বারা জানিবার কোন সম্ভাবনা নাই, চৈতন্য দ্বারা জানিতে হইবে । জগতের সহিত ঐক্য। জগৎকে কাঠগড়ায় দাড় করাইয়া সওয়ালজবাব করাইলে সে খুব অল্প কথাই বলে, জগতের ঘরে বাস করিলে তবে তাহার যথার্থ খবর পাওয়া যায়। তাহা হইলে জগতের হৃদয় তোমার হৃদয়ে তরঙ্গিত হইতে থাকে ; তখন তুমি যে কেবল মাত্র তর্ক দ্বারা জ্ঞানকে জান তাহা নহে, হৃদয়ের দ্বারা জ্ঞানকে অনুভব কর । আমরা যে কিছুই জানিতে পারি না তাহার প্রধান কারণ আমরা নিজেকে জগৎ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দেখি ; যথনি হৃদয়ের উন্নতি সহকারে জগতের সহিত অনন্ত ঐক্য মৰ্ম্মের মধ্যে অমুভব করিতে থাকিব, তখনি জগতের হৃদয়-সমুদ্র সমস্ত বাধ ভাঙ্গিয়া আমার মধ্যে উথলিত হইয়া উঠিবে, আমি কতখানি জানিব কতখানি পাইব তাহার সীমা নাই। একটুখানি বুদ্ধদের মত অহঙ্কারে ফুলিয়া উঠিয়া স্বাতন্ত্র্য অভিমানে জগতের তরঙ্গে তরঙ্গে ভাসিয়া বেড়াইলে মহত্বও নাই, সুখও নাই। জগতের সহিত এক হইবার উপায় জগতের অনুকূলতা করা, অর্থাং ধৰ্ম্ম আশ্রয় করা । ধৰ্ম্ম, জগতের প্রাণগত চেতনা ; তিনি নহিলে তোমার অসাড়ত কে দূর করিবে ?