পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৬৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S86 রবীন্দ্র-রচনাবলী আর উপায় নেই, এইখানেই রাত্রি কাটাতে হবে। ডাক্তারবাবু ঘাসের উপর কম্বল পাতলেন, লণ্ঠনটি রাখলেন কাছে। শস্তুকে নিয়ে গল্প করতে লাগলেন। এমন সময় বেহারাদের সর্দার বুদ্ধ এসে বলে, “ঐ-যে কারা আসছে, ওরা ডাকাত সন্দেহ নেই।” বিশ্বস্তুরবাবু বললেন,—“ভয় কী, তোরা ত সবাই আছিস ।” বুদ্ধ বললে, “বন্ধ পালিয়েছে, পলুকেও দেখছিনে। বক্সি লুকিয়েছে ঐ ঝোপের মধ্যে। ভয়ে বিষ্ণুর হাত পা আড়ষ্ট।” শুনে ডাক্তার ভয়ে কম্পিত। ডাকলেন, “শভূ ।” শম্ভূ বললে, “আজে ।” ডাক্তার বললেন, “এখন উপায় কী ” শম্ভূ বললে, “ভয় নেই, আমি আছি।” ডাক্তার বললেন, “ওরা-যে পাচ জন ।” শম্ভূ বললে, “আমি-যে শস্তু।” এই বলে উঠে দাড়িয়ে এক লম্ফ দিলে, গর্জন ক’রে বললে, “খবরদার।” ডাকাতরা অট্টহাস্ত ক’রে এগিয়ে আসতে লাগল। তখন শম্ভু পালকির সেই ভাঙা ডাণ্ডাখানা তুলে নিয়ে ওদের দিকে ছুড়ে মারলে। তারি এক ঘায়ে তিন জন একসঙ্গে পড়ে গেল। তারপরে শস্তু লাঠি ঘুরিয়ে যেই ওদের মধ্যে ঝাপিয়ে পড়ল বাকি দু-জনে দিল দৌড় । তখন ডাক্তারবাবু ডাকলেন, “শঙ্কু।” শম্ভূ বললে, “আজে ।” বিশ্বম্ভরবাবু বললেন, “এইবার বাক্সটা বের করে ।” শম্ভূ বললে, “কেন বাক্স নিয়ে কী হবে।” ডাক্তার বললেন, “ঐ তিনটে লোকের ডাক্তারি করা চাই । ব্যাণ্ডেজ বাধতে হবে।” রাত্রি তখন অল্পই বাকি। বিশ্বম্ভরবাবু আর শম্ভু দু-জনে মিলে তিন জনের শুশ্রীষা করলেন । সকাল হয়েছে। ছিন্ন মেঘের মধ্যে দিয়ে স্বর্যের রশ্মি ফেটে পড়ছে। একে একে সব বেহার ফিরে আসে। বন্ধ এল, পল্প এল, বক্সির হাত ধ’রে এল বিষ্ণু, তখনো তার হৃৎপিণ্ড কম্পমান ।