পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অচলিত) দ্বিতীয় খণ্ড.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমালোচনা (જ এই অন্ধকার অসীম মহারণ্যের মধ্য দিয়া আমরা একটি মাত্র পায়ের চিহ্ন রাখিয়া আসিতেছি, সে চিহ্ন মুছিয়া মুছিয়া আসিবার আবশ্বকট কি ? পথের মধ্যে যে গাছের তলায় বসিয়া খেলা করিয়াছ, যে অতিথিশালায় বসিয়া আমোদ প্রমোদে বন্ধুবান্ধবদের সহিত রাত্রিযাপন করিয়াছ, একবারও কি ফিরিয়া যাইয়। সেই তরুর তলে বসিতে ইচ্ছা যাইবে না, সেই অতিথিশালার দ্বারে দাড়াইতে সাধ যাইবে না ? কিন্তু ফিরিবে কেমন করিয়া যদি সে পথের চিহ্ন মুছিয়া ফেল ! যে স্থান, যে গৃহ, যে ছায়া, যে আশ্রয় এককালে নিতাস্তই তোমার ছিল তাহার অধিকার যদি একেবারে চিরকালের জন্য হারাইয়া ফেল ! দেশ ও কালেই আমরা বাস করি । অথচ দেশের উপরেই আমাদের যত অনুরাগ। এক কাঠা জমির জন্য আমরা লাঠালাঠি করি, কিন্তু স্থদুর-বিস্তৃত সময়ের স্বত্ব অনায়াসেই ছাড়িয়া দিই, একবারও তাহার জন্য দুঃখ করি না ! পুরাতন দিনের একখানি চিঠি, একটি আংটি, একটি গানের স্বর, একটা যা-হয় কিছু অত্যন্ত যত্বপূর্বক রাখিয়া দেয় নাই, এমন কেহ আছে কি ? যাহার জ্যোৎস্নার মধ্যে পুরাতন দিনের জ্যোংস্কা, যাহার বর্ষার মধ্যে পুরাতন দিনের মেঘ লুক্কায়িত নাই, এত বড় অপৌত্তলিক কেহ আছে কি ? পৌত্তলিকতার কথা বলিলাম, কেন না, প্রত্যক্ষ দেখিয়া অপ্রত্যক্ষকে মনে আনাই পৌত্তলিকতা । জগৎকে দেখিয়া জগতাতীতকে মনে আনা পৌত্তলিকতা । একটি চিঠি দেখিয়া যদি আমার অতীত কালের কথা মনে পড়ে তবে তাহা পৌত্তলিকতা নহে ত কি ? ঐ চিঠিটুকু আমার অতীত কালের প্রতিমা। উহার কোন মূল্য নাই, কেবল উহার মধ্যে আমার অতীত কাল প্রতিষ্ঠিত আছে বলিয়াই উহার এত সমাদর । জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম, এমন কোন লোক কি আছে যে তাহার পুরাতন দিবসের একটা কোনও চিহ্নও রাখিয়া দেয় নাই ? আছে বৈকি ! তাহারা অত্যন্ত কাজের লোক, তাহারা অতিশয় জ্ঞানী লোক! তাহাদের কিছুমাত্র কুসংস্কার নাই। যতটুকুর দরকার আছে কেবল মাত্র ততটুকুকেই তাহার খাতির করে। বোধ করি দশ বৎসর পর্য্যন্ত তাহারা মা-কে মা বলে, তাহার পর তার নাম ধরিয়া ডাকে । কারণ, সস্তান পালনের জন্ত যত দিন মায়ের বিশেষ আবর্তক তত দিনই তিনি ম{ তাহার পর অন্ত বৃদ্ধার সহিত তাহার তফাৎ কি ? h আমি যে সম্প্রদায়ের কথা বলিতেছি, তাহারা যে সত্য সত্যই বয়স হইলে মাকে মা বলেন না তাহা নহে। অনাবশ্বক মাকেও ইহারা মা বলিয়া আদর করিয়া থাকেন। কিন্তু অতীত মাতার প্রতি ইহাদের ব্যবহার স্বতন্ত্ৰ। মান্থের কাছ হইতে ইহারা যাহা