পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8b,” রবীন্দ্র-রচনাবলী একটু চঞ্চলতা আছে। সে-সময়টাতে আমার অন্ত সহস্র কাজ থাকলেও কোনো একটা ছুতো করে আমার মেজো জায়ের ঘরে গিয়ে বসতুম। মেজো জা হেসে হেসে বলতেন, বাস রে, ছোটোরানীর একদও চোখের আড়াল হবার জো নেই—একেবারে কড়া পাহারা। বলি, আমাদেরও তো এক দিন ছিল, কিন্তু এত করে আগলে রাখতে শিখি নি । আমার স্বামী এদের দুঃখটাই দেখতেন, দোষ দেখতে পেতেন না। আমি বলতুম, আচ্ছা, না হয় যত দোষ সবই সমাজের, কিন্তু অত বেশি দয়া করবার দরকার কী ? মানুষ না হয় কিছু কষ্টই পেলে, তাই বলেই কি—কিন্তু তার সঙ্গে পরিবার জো নেই। তিনি তর্ক না করে একটুখানি হাসতেন। বোধ হয় আমার মনের মধ্যে যে একটুখানি কাটা ছিল সেটুকু তার অজানা ছিল না। আমার রাগের সত্যিকার কাজটুকু সমাজের উপরেওনা,আর-কারও উপরেও না, সে কেবল-সে আর বলব না। স্বামী এক দিন আমাকে বোঝালেন—তোমার এই যে-সমস্তকে ওরা মন্দ বলছে যদি সত্যিই এগুলিকে মন্দ জানত তা হলে এতে ওদের এত রাগ হত না । তা হলে এমন অন্যায় রাগ কিসের জন্তে ? অন্যায় বলব কেমন করে ? ঈর্ষা জিনিসটার মধ্যে একটি সত্য আছে সে হচ্ছে এই যে, যা কিছু স্বখের সেটি সকলেরই পাওয়া উচিত ছিল । তা বিধাতার সঙ্গে ঝগড়া করলেই হয়, আমার সঙ্গে কেন ? বিধাতাকে যে হাতের কাছে পাওয়া যায় না । তা ওঁরা যা পেতে চান তা নিলেই হয় । তুমি তো বঞ্চিত করতে চাও না। পরুন না শাড়ি জ্যাকেট গয়না জুতো মোজ, মেমের কাছে পড়তে চান তো, সে তো ঘরেই আছে, আর বিয়েই যদি করতে চান, তুমি তো বিদ্যাসাগরের মতো আমন সাতটা সাগর পেরোতে পার তোমার এমন সম্বল আছে । ওই তো মুশকিল—মন যা চায় তা হাতে তুলে দিলেও নেবার জো নেই। তাই বুঝি কেবল ন্যাকামি করতে হয় যেন যেটা পাই নি সেটা মন্দ, অথচ অন্ত কেউ পেলে সর্বশরীর জলতে থাকে । ষে-মানুষ বঞ্চিত এমনি করেই সে আপনার বঞ্চনার চেয়ে বড়ো হয়ে উঠতে চাও-ওই তার সান্ধন । যাই বল তুমি, মেয়ের বড় স্তাকা। ওরা সত্যি কথাৰে কবুল করতে চায় না, ছল করে । তার মানে ওরা সব চেয়ে বঞ্চিত ।